১) সড়ক দূর্ঘটনা হলে কি করবেন?

 সড়ক দুর্ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। তবুও দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। প্রাণ যায় অহরহ। প্রতিটা সড়ক দুর্ঘটনাই সাধারণত মারাত্মক খবর  বয়ে আনে।

প্রাণটা না গেলেও মারাত্মক জখম বা আজীবনের জন্যে পঙ্গু হওয়ার ঘটনাও ঘটে। আর কেউ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও তার গাড়িটার বেশ ক্ষতি হয়ে যায়। শুধু গাড়ির ওপর দিয়ে গেছে এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও অনেক ঝক্কি। তবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে প্রাথমিক কিছু কাজ করা উচিত।

যদি দুটো গাড়ির মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, তবে প্রথমেই বিতণ্ডায় না জড়িয়ে দুজনকেই কয়েকটি কাজের পরামর্শ দিচ্ছেন অভিজ্ঞজনরা। 

*নিজে এবং অন্য গাড়ির যাত্রীরা সুস্থ আছে কিনা দেখুন
প্রথমেই দেখুন আপনি এবং আপনার গাড়ির সবাই ঠিক আছে কিনা। এবার বের হয়ে যে গাড়ির সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার চালক ও  যাত্রীদের খবর নিন। ব্যক্তি প্রাণ বাঁচানো সবার আগে জরুরি।তেমনটা হয়ে থাকলে অ্যাম্বুলেন্সে খবর দিন। প্রয়োজনে আশপাশের মানুষের সহায়তা চান। আহত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে দেয়া চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিন।

পুলিশে খবর দিন
প্রাথমিক ধকলের পর অবশ্যই পুলিশে খবর দিতে হবে। একমাত্র পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে সমাধানের পথে এগোতে পারবে বলে আশা করা যায়। তারা দুর্ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট করবে।

পুলিশ ছাড়া সাধারণত দুর্ঘটনায় পতিত দুই বাহনের যাত্রী বা চালকের মধ্যে বিতর্ক চলতেই থাকে। সমাধানের পথে এগোতে চায় না কিছু। 

গাড়ির ইন্স্যুরেন্সকে খবর দিন
প্রতিটা গাড়িরই ইন্স্যুরেন্স থাকে। কিংবা গাড়ি কেনার পরই এটা করে নেয়া উচিত। আর দুর্ঘটনার পর পরই ইন্স্যুরেন্সকে খবর দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট এজেন্ট জানামাত্রই ‘ক্লেইম প্রসেস’ নিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন। যদি এটা না করেন তো ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি নিয়ে ব্যাপক ঝক্কি পোহাতে হবে। 

ছবি তুলে ফেলুন
দুর্ঘটনার পর দুটো গাড়ি ঠিক যে অবস্থায় রয়েছে তার ছবি তুলে ফেলুন। এতে করে পরে পুলিশি তদন্তের ক্ষেত্রে আপনি আসল চিত্র দেখাতে পারবেন। পরের ঝামেলা এড়াতে চাইলে এ কাজটি মনে করে সেরে ফেলুন। 

গাড়িটা ওখানেই থাক
দুর্ঘটনার পর রাস্তায় জট লেগে যায়। বিশেষ করে ঢাকার মতো যানজটের শহরে একটা দুর্ঘটনা মানেই হাজারো গাড়ি আটকে পড়া, হাজারো মানুষের চরম দুর্ভোগ। সাধারণ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অনেকেই নিজেদের গাড়িতে রাস্তার পাশে সরিয়ে রাখেন। তবে দুর্ঘটনা ধরন যদি এমন হয় যে আপনাকে এটা নিয়ে পেরেশানি পোহাতে হবে, সেক্ষেত্রে এমনকি গাড়ি সরানোর কাজটিও পুলিশের ওপর ছেড়ে দেয়া ভালো। এতে করে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই গাড়ির অবস্থান দেখে দুর্ঘটনার ধরন বুঝতে পারবে। 

অন্য গাড়ির ইন্স্যুরেন্সের তথ্য নিন
এক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার অন্য গাড়ির ইন্স্যুরেন্সের খবর নিন। যাতে করে পরে ক্ষতিপূরণ লেন-দেন সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা পোহাতে না হয়। যোগাযোগেও সুবিধা হবে। 

বিতণ্ডায় জড়াবেন না
সাধারণত দুই গাড়ির চালক বা যাত্রীরা একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকেন। বুদ্ধিমান হলে এটা করা উচিত না। আপনি কি করেছেন, অন্য গাড়ি কি করেছে ইত্যাদি আলোচনা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। সবই বলবেন পুলিশ আসলে। আর প্রথমেই অন্য গাড়িকে দোষারোপ করতে যাবেন না। এতে অযথাই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তদন্তেই বেরিয়ে আসবে দোষ আসলে কার। 

হতাশ হবেন না
দুর্ঘটনার পর ভয় গ্রাস করে। অনেকে আবেগপ্রবণ এবং হতাশ হয়ে যান। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করবেন না। যদি হতাশা গ্রাস করে, তো পুলিশকে ফোন দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে থাকুন। নিজের ও অন্যদের ছোটখাটো চোট লাগলে তার দেখভাল করুন

২) কেউ পানিতে ডুবে গেলে প্রথমেই যা করবেন?

**ছবিতে পানিতে ডোবা রোগির চিকিসা পদ্ধতি দেখানো হচ্ছে**

বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে অনেকেই মারা যান। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডুবে মৃত্যু। গ্রামের শিশুরাই নয়, শহরের শিশুরাও বেড়াতে গিয়ে এমন করুণ মৃত্যুর শিকার হয়। এমনকি খুব অল্প পানিতেও শিশু মারা যেতে পারে। বেশিরভাগ শিশুই পানিতে ডুবে মারা যায় সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে এবং মায়ের ১০০ গজদূরত্বে। বিশেষ করে মা যখন কাজে ব্যস্ত থাকেন।

বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও ইনজুরি সার্ভে অনুযায়ী, এদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৭ হাজার শিশু মারা যায় পানিতে ডুবে। যাদের বয়স ১ থেকে ৪ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৬ জন শিশু মারা যায়। পানিতে ডুবে বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনাই ঘটে পুকুর ও খালে। বিশেষত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। এমনকি ১ থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে।

পরক্ষ: বিভিন্ন কারণে মানুষ পানিতে ডুবে যেতে পারে। পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণ জানা থাকলে সর্তক থাকার পাশাপাশি চিকিৎসায়ও অনেক সময় সুবিধা হয়। সাঁতার না জানা কোনো ব্যক্তি পুকুর, নদীতে কিংবা গভীর কোনো জলাশয়ে পড়ে গেলে, নৌ দুর্ঘটনার কবলে পড়লে, সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে যানবাহন পানিতে পড়ে গেলে, বন্যা কিংবা নদীভাঙন বা জলোচ্ছ্বাসের সময় পানিতে পড়ে গেলে, অসাবধানতাবশত শিশু পানিতে পড়ে গেলে বা বহুবিধ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পানিতে ডুবে মারা যেতে পারেন।

কারণ: পানিতে ডুবে মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া। পানি শ্বাসনালী ও ফুসফুসে ঢুকে গেলে মূলত এমনটি হয়। এ ছাড়া ল্যারিংক্স ও শ্বাসনালীর অনৈচ্ছিক পেশীর তীব্র সংকোচনেও শ্বাসনালীর মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ২ থেকে ৩ মিনিট শ্বাস বন্ধ থাকলে মস্তিষ্কের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। ৪ থেকে ৬ মিনিট শ্বাসক্রিয়া বন্ধ থাকলে মৃত্যু পর্যন্ত হয়। শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হওয়া ছাড়াও প্রচুর পানি পান করার কারণে রোগীর পাকস্থলী ফুলে যায়।

 পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। এজন্য এ ধরনের মৃত্যু ঠেকাতে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা অনুসরণ করতে হবে, যেমন১. কেউ পানিতে ডুবে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমে তাকে পানি থেকে তুলে আনুন। এক্ষেত্রে প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। পানি থেকে তুলে আনার ক্ষেত্রে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে, অনেক সময় উদ্ধারকারীও বিপদে পড়তে পারেন। ডুবন্ত ব্যক্তি অবলম্বন পেলেই আঁকড়ে ধরে এবং উপরে ওঠার চেষ্টা করে। ফলে ডুবন্ত ব্যক্তি উদ্ধারকারীকে সজোরে জড়িয়ে ধরতে পারে। এতে দেখা দিতে পারে বিপত্তি। ডুবন্ত কাউকে সাহায্য করতে গেলে সাবধান থাকতে হবে। তাই ডুবন্ত ব্যক্তিকে পেছন থেকে হাতসহ জড়িয়ে ধরে পানি থেকে তুলতে পারেন। এ ছাড়া লাইফ লাইন থাকলে তা ছুঁড়েও ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে পারেন। লাইফ লাইন না থাকলে যেসব বস্তু পানিতে ভাসে এবং ডুবে যাওয়া ব্যক্তির ওজন বহন করতে পারে এমন বস্তু পানিতে ছুঁড়ে মারতে হবে। উদ্ধারকারী সাঁতার না জানলে ডুবন্ত ব্যক্তিকে ঠেলে ঠেলে তীরের দিকে নিয়ে যেতে হবে।

২. পানি থেকে তোলার পর উপুড় করে দেখতে হবে শ্বাস-প্রশ্বাস আছে কি না। নাম ধরে ডাক দিয়েও দেখা যেতে পারে তিনি সাড়া দেন কি না। যদি শ্বাস-প্রশ্বাস না থাকে বা শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়, তাহলে খেয়াল করতে হবে শ্বাসনালীর কোথাও কিছু আটকে আছে কি না। এ জন্য আঙুল দিয়ে মুখের মধ্যে কাদা-মাটি থাকলে তা বের করে দিতে হবে। তার পরও শ্বাস না নিলে মাথা টানটান করে ধরে মুখ হা করাতে হবে। এবার উদ্ধারকারী ব্যক্তিকে বুক ভরে শ্বাস নিতে হবে এবং ডুবন্ত ব্যক্তির মুখের সঙ্গে এমনভাবে মুখ লাগাতে হবে যেন কোনো ফাঁকা না থাকে। শিশু বা কম বয়সী হলে নাক-মুখ একসঙ্গে মুখের মধ্যে পুড়তে হবে আর বয়স্ক ব্যক্তি হলে নাক হাত দিয়ে চেপে ধরে মুখে মুখ লাগাতে হবে। এ অবস্থায় উদ্ধারকারী জোরে শ্বাস নিয়ে ডুবন্ত ব্যক্তির মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে হবে। দেখতে হবে যে, শ্বাস দেওয়ার ফলে ডুবন্ত ব্যক্তির পেট ফুলে যায় কি না। যদি পেট ফুলে যায়, তাহলে বোঝা যাবে যে কৃত্রিম উপায়ে এভাবে শ্বাস দেওয়া ঠিকমতই হচ্ছে। ডুবন্ত ব্যক্তি নিজে থেকে শ্বাস না নেওয়া পর্যন্ত এভাবে চালাতে হবে।

৩. কৃত্রিমভাবে শ্বাস প্রদানের পাশাপাশি হাত ধরে কিংবা গলার উঁচু অংশ তথা অ্যাডামস অ্যাপেলের একপাশে হাত দিয়ে দেখতে হবে যে, নাড়ির স্পন্দন আছে কি না। যদি না থাকে তাহলে বুকে চাপ দিতে হবে। বুকের বামপাশে হাত রেখে জোরে জোরে চাপ দিতে হবে, যেন বুক বেশ খানিকটা ধেবে যায়। যদি ডুবন্ত ব্যক্তি এক থেকে দুই বছরের শিশু হয়, তাহলে শিশুর বুক দুই হাত দিয়ে ধরে বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিতে হবে। এভাবে প্রতি ত্রিশবার চাপ দেওয়ার পর পূর্বের মতো দুইবার করে শ্বাস দিতে হবে। নাড়ির গতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এরকম চক্রাকারে চালাতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা চলার পাশাপাশি দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে।

৪. শিশু পানিতে থাকার কারণে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। তাই শরীর গরম রাখার জন্য কাপড়-চোপড় দিয়ে ভালো করে ঢেকে রাখা উচিত। রোগীর অবস্থা ভালো থাকলে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে ও হৃৎস্পন্দন চালু থাকলে তাকে কুসুম গরম দুধ, চা ইত্যাদি খেতে দেওয়া যেতে পারে।

যা এড়িয়ে চলবেন: পানি থেকে তুলে যে কাজগুলো এড়িয়ে চলবেন

১. অনেকে পানি থেকে তুলেই পেটে চাপ দিয়ে বা শিশুকে উল্টো করে পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করেন, যা মোটেও ঠিক নয়। এতে শিশু বমি করে দিতে পারে যা আবার ফুসফুসে প্রবেশ করে পরবর্তীতে জটিলতা তৈরি করতে পারে।

২. সাঁতারে অপারদর্শী কোনো লোক ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধার করতে যাবেন না, কারণ প্রায়ই এতে দুজনের জীবনই বিপন্ন হতে পারে।

৩. রোগীর ফুসফুস ও শ্বাসনালী থেকে পানি বের করার জন্য খুব বেশি সময় না নেওয়াই ভালো।

৪. প্রাথমিক বিপদ কাটিয়ে ওঠার পর রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে না নিয়ে ঘরে বসিয়ে রাখবেন না।

প্রতিরোধের উপায়: পানিতে ডোবা থেকে দূরে থাকতে কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনুসরণ করা যেতে পারে

১. পানিতে ডোবা প্রতিরোধে সাঁতার শিখুন।

২. শিশুরা বাথটাবে কিংবা পানিভর্তি বালতিতেও ডুবে যেতে পারে। শুধু নাক-মুখ পানিতে ডুবে গেলেই শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে শিশু মারা যেতে পারে। তাই সাবধানতার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য শিশুর নিরাপত্তায় পানি ধরে রাখার পাত্রগুলোয় ঢাকনার ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. বেড়াতে গিয়ে শিশু পুকুর-নদীতে গোসল করার সময় ডুবে যেতে পারে। শিশুদের কোনো অবস্থায়ই জলাশয়ের কাছে বয়স্ক মানুষের তত্ত্বাবধান ছাড়া একা কিংবা দলবেঁধেও ঘুরতে যেতে দেওয়া ঠিক নয়।

৪. শিশুর মা কাজে ব্যস্ত থাকার সময় পরিবারের অন্য সদস্যের শিশুর দেখভালের দায়িত্ব নিতে হবে।

৫. গ্রামে পুকুর-খালের চারপাশে বেড়া দিয়ে দিন, যেন শিশু অসাবধানতাবশত পুকুরে যেতে না পারে।

৬. নদীপথে যাত্রার সময় লাইফ জ্যাকেট পরিধান করুন।

৭. যাদের খিঁচুনি আছে, তারা পুকুরে বা সুইমিংপুলে সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকবেন।

৩) আগুন লাগলে কি করবেন?

আগুন যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় লাগতে পারে। তবে, সামান্য কিছু তথ্য জানা থাকলে বা একটু সতর্ক হলেই বাঁচানো যেতে পারে মূল্যবান জীবন ও সম্পদ। তাহলে জেনে নিন আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আপনার করণীয়।
* শুরুতেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করুন।
* বিচলিত হয়ে উপস্থিত বুদ্ধি হারাবেন না। আগুন বলে চিৎকার করবেন এবং ফায়ার ফাইটিং চর্চার মাধ্যমে ওপরে উল্লেখিত অগ্নি নির্বাপক বস্তু ব্যবহার করবেন।
* এক্ষনেই ফায়ার সার্ভিস অফিসের উল্লেখিত ফোন বা জরুরি সেবার নম্বরে ফোন করুন। আর হঠাৎ কোথাও যদি আগুন লেগেই যায় তাহলে স্থানীয় ফায়ার স্টেশনের নম্বরে খবর দেবেন।
* বৈদ্যুতিক আগুনের ক্ষেত্রে দ্রুত মেইন সুইচ বন্ধ করুন।
* তেল–জাতীয় পদার্থ ও পানি বৈদ্যুতিক আগুন নেভাতে ব্যবহার করবেন না।
* বৈদ্যুতিক আগুনে ভেজা মোটা কাপড় বা কম্বল চাপা দেবেন।
* পরনের কাপড়ে আগুন লাগলে মাটিতে গড়াগড়ি করবেন বা ভেজা কম্বল গায়ে দেবেন।
* বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করুন।
*বৈদ্যুতিক লাইনে/যন্ত্রপাতিতে আগুন ধরলে পানি ব্যবহার করবেন না। বহনযোগ্য কার্বন ডাই-অক্সাইড বা ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করুন। না পেলে শুকনো বালু ব্যবহার করুন।
*তেল–জাতীয় পদার্থ থেকে লাগা আগুনে পানি ব্যবহার বিপজ্জনক। বহনযোগ্য ফোম–টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা শুকনো বালু অথবা ভেজা মোটা কাপড়/চটের বস্তা দিয়ে চাপা দিন।
*বাসায় বা অফিসে আগুন লাগলে মূল্যবান জিনিস সরানোর চেষ্টা করবেন না। আপনার ও পরিবারের সদস্যদের জীবন বাঁচানোই এ সময় জরুরি। এক সেকেন্ড সময়ও মূল্যবান।
* পরিস্থিতি যতটা শান্ত রাখা যায়, বিপদ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তত বেশি বাড়ে।
*গায়ে আগুন লেগে গেলে দৌড়াবেন না। গড়িয়ে গড়িয়ে যেদিকে যেতে চান সেদিকে যান। কাপড় দিয়ে নাক ঢাকুন, হাতের কাছে পানি থাকলে কাপড় ভিজিয়ে নিন।
*সিঁড়িতে ধোঁয়া দেখতে পেলে ওপরে উঠবেন না, ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
*ধোঁয়া বাতাসের চেয়ে হালকা, তাই তা দ্রুত ওপরের দিকে ওঠে। ধোঁয়া শ্বাসের সঙ্গে ভেতরে ঢুকলেই বিপদ!
*সিঁড়ি দিয়ে নামা বিপজ্জনক হলে বারান্দা বা জানালার কাছে চলে যান, এতে হাতে বেশি সময় পাওয়া যায়।
*ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পথ পরিহার করুন। যেতে বাধ্য হলে উপুড় হয়ে বা হামাগুড়ি দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করবেন। ধোঁয়া ওপরে ওঠে বলে নিচের বাতাসে অক্সিজেন বেশি থাকে।

*ধোঁয়ায় কিছু দেখা না গেলে ও একাধিক সদস্য থাকলে একজনের পেছনে আরেকজন হামাগুড়ি দেবেন, একে–অন্যের কাপড় বা পা ধরে এগোবেন।

 *বিপদে কিছুক্ষণ পরপর একে–অপরকে সাহস করলে বা দিলে বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

 চিকিৎসা: পোড়া জায়গায় সম্ভব হলে ট্যাপের ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে অথবা ভেজানো তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখতে হবে। ফোসকা পড়ে গেলে তা গেলে না ফেলা ভালো। এতে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে। যদি পোড়ার জায়গা অল্প হয়, তাতে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে দেয়া বার্না, বার্নল বা মিল্কক্রিম লাগিয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে হাসপাতালে আনতে হবে। বাসায় যদি কিছু না থাকে ডিমের সাদা অংশ অথবা নিওবার্নিয়া মলম লাগাতে পারেন।

৪) ভূমিকম্প হলে কী করবেন, কী করবেন না?

ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে, এমন মত বিশেষজ্ঞদের। আবহাওয়াবিদদের কথা, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া খুব জটিল বিষয়। কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকম্পকে সরাসরি নির্ণয় করা যায় না। ভূমিকম্পবিষয়ক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সরকারের সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।

আবার ব্যক্তিপর্যায়েও ভূমিকম্পের সময় কিছু করণীয় আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ভূমিকম্পের সময় করণীয় নিয়ে একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এটি দেওয়া আছে।

             নিচে করণীয়গুলো তুলে ধরা হলো:

  ১ ) ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হবেন না।

  ২ )  ভূকম্পনের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনো আসবাবের     নিচে আশ্রনিন।

             ৩  ) রান্নাঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে আসুন।

              ৪ )   বিম, কলাম ও পিলার ঘেঁষে আশ্রয় নিন।

             ৫ ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে স্কুলব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন    ৬ ) ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে খোলাস্থানে আশ্রয় নিন

৭) গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল, মার্কেট ও সিনেমা হলে থাকলে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড কিংবা     ধাক্কাধাক্কি না করেদুহাতে মাথা ঢেকে বসে পড়ুন।

 ৮ ) ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলাবালু শ্বাসনালিতে না ঢোকে।

  ৯) একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বের হয়ে খালি জায়গায় আশ্রয় নিন।

 ১০)  ওপর তলায় থাকলে কম্পন বা ঝাঁকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে; তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে বা লিফট ব্যবহার  করে নামা থেকে বিরত থাকুন।

১১)  কম্পন বা ঝাঁকুনি থামলে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন এবং খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিন।

১২)  গাড়িতে থাকলে পদচারী–সেতু, উড়ালসড়ক, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরে থাকুন।

  ১৩)  ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট, পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বাড়িতে রাখুন।

                 ১৪) বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করুন।

 # ভমিকম্পে আহত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা:-

  আহত ব্যক্তির অবস্থা অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে দেয়া সামগ্র্রী গ্রহন করুন।

       আঘাত জটিল হলে তারাতারি হাসপাতালে যোগাযোক করুন

৫) ইলেকট্রিক শক খেলে যা করবেন?

শক খাওয়া ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড যদি বন্ধ হয়ে যায় তবে তার বুকের ওপর জোরে জোরে চাপ দিয়ে হৃৎপিণ্ড চালুর চেষ্টা করুন। এ সময় রোগীর মুখ দিয়ে বাতাস প্রবেশ করিয়ে শ্বাস নেয়ার ব্যবস্থা করুন।

আমাদের সবার বাড়িতেই ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি আছে। এসব চালাতে গিয়ে অসাবধানতায় ইলেকট্রিক শক খাওয়ার ঘটনাও বেড়ে চলছে। তাই ইলেকট্রিক দুর্ঘটনার ব্যাপারে জানা থাকা খুব জরুরি। একটু সচেতনতা বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে আপনাকে এবং আপনার প্রিয়জনকে।

চলুন আজ দেখে নেই, কেউ ইলেকট্রিক শক খেলে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে।

১. কেউ ইলেকট্রিক শক খেলে তাকে ধরা যাবে না। তেমন করলে আক্রান্তকে তো বাঁচাতে পারবেনই না, উল্টো আপনিও একই সঙ্গে শক খাবেন।

২. কেউ শক খেয়েছে বুঝতে পারলে প্রথমেই কারেন্টের সুইচ বন্ধ করুন। যদি সম্ভব না হয় তাহলে শুকনো খবরের কাগজ, উলের কাপড়, শুকনো কাঠের টুকরা অথবা পলিথিন ব্যাগে হাত মুড়িয়ে শক খাওয়া ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে ইলেকট্রিক শকের উৎস থেকে আলাদা করে দিন। যদি কিছুতেই কাজ না হয়, তাহলে দ্রুত বৈদ্যুতিক অফিসে খবর দিন।

৩. শক খাওয়া ব্যক্তির শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে দ্রুত কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়ার ব্যবস্থা করুন। সাধারণত বলা হয় যে ৩ মিনিটের ভেতর কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা গেলে ১০ জনের ভেতর ৭ জনকে বাঁচানো সম্ভব। দেরি করলে বাঁচানোর সম্ভাবনা কমে আসে। এমন জরুরি মুহূর্তে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার ওপর আক্রান্ত ব্যক্তির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নির্ভর করে। একই সঙ্গে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থাও করুন।

৪. শক খাওয়া ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড যদি বন্ধ হয়ে যায় তবে তার বুকের ওপর জোরে জোরে চাপ দিয়ে হৃৎপিণ্ড চালুর চেষ্টা করুন। এসময় রোগীর মুখ দিয়ে বাতাস প্রবেশ করিয়ে শ্বাস নেয়ার ব্যবস্থা করুন।

৫. শক খাবার পরও শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে তবে খুব বেশি ভয়ের কিছু নেই। রোগীকে শুয়ে থাকতে বলুন। এ সময় একজন ডাক্তারকে খবর দিন অথবা হাসপাতালে নিয়ে যান।

কারেন্টের শক লেগে অনেক সময়ই দেহের কিছুটা অংশ পুড়ে যায়। এই পরিস্থিতির শিকার হলে প্রথমেই জায়গাটা খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছ জীবাণুমুক্ত জল দিয়ে জায়গাটা ধুয়ে ফেলুন। তারপর প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে  অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কোনও মলম লাগান। এরপর সোজা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তিনিই রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি দেখে পোড়ার সমস্যা সমাধানের কিছু ওষুধ ও মলম দেবেন। এতেই সমস্যার নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

৬) হাত বা পা ভাঙলে তাৎক্ষনিক কি করবেন? 

পড়ে গিয়ে বা অন্য কোনোভাবে আঘাতে হাড় ভেঙে যেতে পারে। সাধারণত আমরা ব্যথা পেলে স্থির থাকি না। অন্যজন গিয়েই টানাটানি শুরু করি; হাড় জোড়া লাগাতে চাই। এটি কিন্তু খুবই মারাত্মক ভুল। হাড় ভেঙে গিয়ে যতটা ক্ষতি হয়, এর চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় এই টানাটানিতে। কারণ, ভাঙা হাড় নড়াচড়া করলে ভাঙা অংশ আশপাশের মাংসপেশী, রক্তনালীকে ছিড়ে ফেলতে পারে। এতে হাড় ভাঙ্গা পরবর্তী অংশ রক্তশূন্যতার কারণে পঁচেও যেতে পারে। কোনো কারণে হাড়ে ব্যথা পাওয়ার পর যদি সেটি অনেক ফুলে যায়, নড়াচড়া করলে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে হাড় ভাঙার আশঙ্কা থাকে। যদিও শুধু এ লক্ষণ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এজন্য দরকার এক্সরে। এক্সরে করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে হাড় ভেঙেছে কি না।

অনেকে আলসেমি করে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না বা হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যান। এর পরিণাম কিন্তু ভয়াবহ হয়। দ্রুত চিকিৎসা করালে যত তাড়াতাড়ি হাড় জোড়া লাগার সম্ভাবনা থাকে, দেরি করলে সেটি ক্ষীণ হয়ে যায়। এমনকি হাড় ঠিক জায়গায় জোড়া না লেগে বেঁকে জোড়া লাগতে পারে বা জোড়া নাও লাগতে পারে। অনেকে হাড় ভেঙে গেলে বাঁশের চাটাই দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেন। এতে হাতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাত পঁচে যেতে পারে। অনেকে আবার গোবর বা গাছের ছাল বাকলের প্রলেপ দেয়। এতেও হাতে পচন ধরতে পারে। আসলে হাড় ভাঙলে নড়াচড়া একেবারেই করা যাবে না। রোগীকে ভাঙা স্থানের দুই পাশে কাঠ দিয়ে বেঁধে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

জরুরী চিকিৎসা বা করণীয়:-

১. জোড়াকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে

২. বরফের টুকরা টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যথা ও ফুলা কমে আসবে। প্রতি ঘন্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘন্টা পর পর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। তবে এটা সহ্যের মধ্যে রাখতে হবে। এই পদ্ধতি আঘাতের ৪৮-৭২ ঘন্টা পর্যন্ত চলবে।

৩. জোড়ায় ইলাসটো কমপ্রেসণ বা স্প্লিন্ট ব্যবহারে ফুলা ও ব্যথা কমে আসে।

৪. জোড়ার নিচে বালিশ দিয়ে উঁচু করে রাখলে ফুলা কম হবে।

৫. কোমরে সাপোর্ট বা কোরসেট ব্যবহর করতে হবে।

৬. এনালজেসিক বা ব্যথানাশক ও দরকার হলে এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন।

৭. হাড় ভাঙ্গলে বা জোড়া স্থানচ্যুতি হলে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।

প্রয়োজনীয়  প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যথা ও ফুলা সেরে উঠার পর, জোড়ার বিভিন্ন শারিরীক পরীক্ষার মাধ্যমে কি কি লিগামেন্ট, পেশী বা মেনিসকাস ইনজুরি হয়েছে এবং এর তীব্রতা নির্ণয় করতে হবে। কখনও কখনও এক্স-রে ও এম.আর.আই. এর সাহায্য নিতে হয়। লিগামেন্ট, মেনিসকাস, জোড়ার আবরণ, পেশী ইনজুরি ও জোড়া বার বারছুটে যায় চিকিত্সা প্রদান করতে সক্ষম এমন আর্থ্রোস্কোপিক চিকিত্সকের কাছে বা সেন্টারে রোগীকে পাঠাতে হবে। প্রাথমিক বা শল্য চিকিত্সার পর নিয়মিত ও উপযুক্ত পরিচর্যা করে জোড়ার স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

হাড় ভাঙ্গার পর সাথে সাথে কী করবেন?
যদি Close Fracture হয়, অর্থাৎ রক্ত যদি বের না হয় তবে কিছু ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে RICEN থেরাপি বহুলপ্রচলিত। তা হলো R=Rest. আক্রান্ত স্থানটিকে বিশ্রামে রাখতে হবে। I=Ice therapy বা বরফ লাগাতে হবে। C=crape bandage দিয়ে নড়াচড়া বন্ধ করানো। E= Elevation অর্থাৎ আক্রান্ত অঙ্গটি একটু উঁচুতে রাখতে হবে। যাতে অঙ্গটি হৃৎপিণ্ড থেকে ওপরে থাকে। N= NS AID দিতে হবে, অর্থাৎ বেদনানাশক ওষুধ দিতে হবে।

৭)কেটে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা ?

ছোটোখাটো কাটা-ছেঁড়ার সমস্যাগুলো সাধারণত তেমন গুরুতর হয় না এবং ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমেই সারিয়ে তোলা যায়। তবে কিছু কিছু কাটা-ছেঁড়ার ক্ষেত্রে ইনফেকশন হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। এজন্য এসব ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকা উচিত। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কাঁটা-ছেড়ার ক্ষতগুলোতে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা করা হলে সেটি ইনফেকশন ও গভীর দাগ হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।

তলপেট ও বুকের কোথাও কেটে গেলে তা থেকে গুরুতর জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ এরকম কাটায় শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলোতে আঘাত লেগে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। এজন্য তলপেট ও বুকে কাটা-ছেঁড়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার সাথে সাথে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

কাটা-ছেঁড়ার প্রাথমিক চিকিৎসায় নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন—

১. রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা করুন

যেকোনো কাটা-ছেঁড়ায় প্রথমেই ক্ষত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে।

প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে দেয়া প্রথমে স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোমতো পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করে নিতে  হবে। এতে হাত থেকে ক্ষতস্থানে জীবাণু সংক্রামণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে। সম্ভব হলে গ্লাভস পরে নিন।

ক্ষতস্থানের ওপরে কোনো কাপড় থাকলে সেটি সরিয়ে নিন। তবে কাপড় যদি ক্ষতস্থানের সাথে আটকে যায় অথবা ক্ষতের অনেক ভেতরে ঢুকে যায় তাহলে সেটি টানাটানি করে সরানোর চেষ্টা করবেন না।

এবার পরিষ্কার ও শুকনো এক খণ্ড মোটা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থানটি কয়েক মিনিট ভালোমতো চেপে ধরে রাখতে হবে। যতক্ষণ রক্তক্ষরণ বন্ধ না হয়, ততক্ষণ এভাবে চেপে ধরে রাখতে হবে। রক্তক্ষরণ বন্ধে এমন কাপড় বেছে নেওয়া উচিত যার শোষণক্ষমতা ভালো। যেমন: গজ ব্যান্ডেজ, মোটা রুমাল ও তোয়ালে। এক্ষেত্রে তুলা জাতীয় কিছু ব্যবহার করা উচিত নয়। তুলায় থাকা আঁশ ক্ষতস্থানে আটকে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, ক্ষততে কোনো বস্তু আটকে থাকলে তা বের না করে, ক্ষততে সরাসরি চাপ দেওয়া যাবে না। চোখের ক্ষতেও সরাসরি চাপ দিবেন না।

আক্রান্ত অংশ যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করতে হবে। সম্ভব হলে রোগীকে শুইয়ে দিতে হবে।

হাতের কোথাও কাটলে ক্ষতের অংশটি উঁচু করে তুলে ধরতে হবে (মাথা থেকে উঁচুতে)। পায়ের কোথাও কাটলে পা উঁচুতে তুলে ধরতে হবে (হৃৎপিণ্ড থেকে উঁচুতে)। এতে আক্রান্ত অংশে রক্তসঞ্চালন কমবে এবং রক্তপাত কমে আসবে।

২. ক্ষতস্থান পরিষ্কার করুন

ক্ষত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হলে কেটে যাওয়া অংশটুকু পরিষ্কার করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন—

১)প্রথমে নিজের অথবা যে ড্রেসিং করবে তার হাত ভালোভাবে সাবান-পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

২)কাটা-ছেঁড়ার অংশটি বিশুদ্ধ পানিতে ৫–১০ মিনিট ধরে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

৩)সাবান-পানি দিয়ে ক্ষতের আশেপাশের অংশটি পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে ক্ষতস্থানের ভেতরে যেন সাবান না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া কোনো অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।

ধারালো ও চোখা জিনিস ঢুকে গিয়ে কেটে গেলে ক্ষতস্থানের ভেতরে কিছু ঢুকে আছে কি না সেটি ভালোভাবে লক্ষ করতে হবে। যদি এমন কিছু পাওয়া যায় তাহলে তা বের না করে দ্রুত হাসপাতালে অথবা ডাক্তারের কাছে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে।

কাটা-ছেঁড়ার ভেতরে কিছু দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু যেই জিনিস দিয়ে কেটে-ছিঁড়ে গেছে তার সবগুলো খুঁজে পাওয়া না গেলেও ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি।

কোনোভাবেই ক্ষতস্থানে কোনো ধরনের খোঁচাখুঁচি করবেন না।

৩. ক্ষতস্থানে ড্রেসিং

ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার পর ড্রেসিং করে ক্ষতস্থান মুড়ে দিলে তা ধুলাবালি ও রোগজীবাণু থেকে ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করবে।

ক্ষতস্থানটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে আলতো করে চেপে চেপে শুকিয়ে নিতে হবে।

এরপর ‘অ্যাডহেসিভ ব্যান্ডেজ’, অর্থাৎ ক্ষতস্থানকে পুরোপুরি ঢেকে দিয়ে তার চারিদিকে আপনা-আপনি লেগে থাকে—এমন ব্যান্ডেজ লাগাতে হবে। এই ধরনের ব্যান্ডেজ  প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে দেয়া আছে জীবাণুমুক্ত (স্টেরাইল) গজ ব্যান্ডেজ দিয়ে ক্ষতটি ব্যান্ডেজ করে নিতে হবে।

উভয় ধরনের ব্যান্ডেজ এর আকারই ক্ষতের আকারের চেয়ে সামান্য বড় হতে হবে।

ব্যান্ডেজ এর যেই অংশটি ক্ষতের ঠিক ওপরে বসানো হবে তাতে যেন কোনোভাবেই হাতের স্পর্শ না লাগে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

ব্যান্ডেজ করার নিয়ম: ব্যান্ডেজ এর ছোটো প্রান্তটি কেটে যাওয়া অঙ্গ এবং ড্রেসিং প্যাডের চারদিকে একবার মুড়িয়ে নিন। অপর প্রান্তটি হাতের চারদিকে ঘুরিয়ে আনুন যাতে পুরো প্যাডটি ঢেকে যায়। দুটো প্রান্ত কাছাকাছি এনে প্যাডের ওপরে বেঁধে দিন। এমনভাবে বাঁধবেন যেন জায়গাটি হালকা চাপে থাকে এবং ব্যান্ডেজের গিঁট খুলে না যায় ।

৪. নিয়মিত ড্রেসিং বদলে নিন

প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত ড্রেসিং বদলাতে হবে। ড্রেসিং ভিজে গেলে কিংবা ময়লা হয়ে গেলে বদলে ফেলতে হবে। ড্রেসিংটি পানিমুক্ত রাখতে গোসল করার আগে পানিনিরোধক কিছু (যেমন: প্লাস্টিক, পলিথিন) দিয়ে ড্রেসিংটি মুড়ে নিতে হবে।

কিছুদিন পর ক্ষত সেরে গেলে ড্রেসিং খুলে ফেলতে পারেন। উল্লেখ্য, ড্রেসিং রক্তে ভিজে গেলে সেটি না সরিয়ে, সেটির উপর অন্য আরেকটি ড্রেসিং দিয়ে ক্ষতস্থানে চেপে রাখুন। এতেও যদি রক্ত পড়া বন্ধ না হয়, দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যান

৫. ব্যথানাশক ঔষধ সেবন

ক্ষতস্থানে ব্যথা হলে ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করা যাবে। যেমন: প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন।

যদি অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হতে থাকে, রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান কিংবা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করুন।

যখন ডাক্তার এর কাছে যাবেন

যদি ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অথবা যদি মনে করেন ইতোমধ্যে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছে, দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান।

যেসব লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন ক্ষততে ইতোমধ্যে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছে—

  • ক্ষতের অংশটি ফুলে যাওয়া
  • ক্ষতস্থানের ভেতরে কিংবা চারপাশে পুঁজ হওয়া
  • ক্ষতস্থানে থেকে তরল কিছু বের হওয়া
  • ক্ষতস্থানটি লাল এবং গরম হয়ে যাওয়া
  • ক্ষততে ব্যথা বাড়া
  • থুতনির নিচে, ঘাড়ে, বগলের নিচে অথবা কুঁচকিতে থাকা গ্রন্থিগুলো বিচির মতো ফুলে যাওয়া
  • অসুস্থ অনুভব করা
  • জ্বর আসলে বা শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪° ফারেনহাইট (৩৮° সেলসিয়াস) এর চেয়ে বেশি হলে

 যা করবেন না

  • খালি চোখে দেখে পরিষ্কার মনে হলেও ক্ষতস্থানকে জীবাণুমুক্ত ভাববেন না। অবশ্যই ক্ষতস্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
  • ক্ষতস্থানের ওপর ফুঁ দিবেন না।
  • ক্ষত গভীর হলে রক্তপাত কমে যাওয়ার পর তা পরিষ্কার করার চেষ্টা করবেন না। গভীর ক্ষতের সঠিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যান।
  • ক্ষতস্থানের গভীরে ঢুকে যাওয়া কোনো কিছু টেনে বের করার চেষ্টা করবেন না।
  • ক্ষতস্থানে বড় কিছু ঢুকে গেলে তা বের করার অথবা তাতে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বরং ডাক্তারের কাছে যান।

যেসব লক্ষণ দেখা গেলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নিতে হবে—

  • ক্ষতস্থান অনেক বড় বা গভীর হলে
  • ক্ষত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ না হলে
  • যদি ক্ষতের অংশে ক্রমাগত অবশ অনুভূতি থাকে
  • শরীরের কোনো অঙ্গ নাড়াতে অসুবিধা হয়
  • চেহারার কোথাও গুরুতরভাবে কেটে গেলে। পরবর্তীতে দাগ হয়ে যাওয়া এড়াতে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন
  • হাতের তালুতে কেটে গেলে তা দেখে ইনফেকশন হয়েছে মনে হলে
  • বড়শি কিংবা মরিচা-ধরা কোনো বস্তু (যেমন: পেরেক, ছুড়ি) দিয়ে কেটে গেলে কিংবা মাংস ফুটো হয়ে ক্ষত হলে
  • ধমনী কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়লে। এই রক্ত টকটকে লাল রংয়ের হয়। সাধারণত এই ধরণের রক্তপাত প্রাথমিক চিকিৎসায় বন্ধ করা কঠিন

এ ছাড়া টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার এর সবগুলো টিকা নেওয়া না থাকলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

হাসপাতালে ভালোভাবে পরীক্ষা করা হবে ক্ষতস্থানটিতে কোনো ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। ক্ষতস্থানে টিটেনাস এর ইনফেকশন প্রতিরোধে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ড্রেসিং করার আগে ক্ষতস্থানটি বন্ধ করার জন্য এতে সেলাই কিংবা বিশেষ আঠা লাগানোর প্রয়োজন হতে পারে।

ইনফেকশন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকলে সাধারণত ক্ষতস্থানটি বন্ধ করা হয় না। এক্ষেত্রে ক্ষতটি বিশেষভাবে ড্রেসিং করে দেওয়া হয়।

কাটা-ছেঁড়ার জটিলতা

কখনো কখনো কাটা-ছেঁড়া থেকে নানান রকম জটিলতা তৈরি হতে পারে। যেমন: ইনফেকশন রক্তে ছড়িয়ে পড়া, পচন ধরা, অঙ্গচ্ছেদ, ক্ষতস্থানে কাজ করার ক্ষমতা হারানো, স্নায়ু কিংবা কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।

বিভিন্ন শারীরিক অবস্থায় (যেমন: ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তনালীর রোগে) ক্ষতস্থানে রক্ত প্রবাহ কম হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ক্ষত সারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে। যদি মনে হয় দীর্ঘদিন পরেও ক্ষত সারছে না, ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

জটিলতা প্রতিরোধে টিকা

কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার টিটেনাস টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। বিশেষত যদি—

  • আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি টিটেনাস টিকার কোর্স সম্পন্ন না করে
  • অথবা বিগত ৫ বছরে টিটেনাসের কোনো টিকা না নিয়ে থাকে
  • এবং ক্ষতটি গভীর কিংবা ক্ষততে ইনফেকশন হয়েছে মনে হয়

আঘাত পাওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এই টিকা নেওয়া উচিত। ক্ষতের ধরনের ওপর নির্ভর করে টিটেনাস টিকার পাশাপাশি ‘টিটেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ নামক আরেক ধরনের ইনজেকশন নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

কোনো পশুর (যেমন: কুকুর বা বিড়ালের) কামড় থেকে ক্ষত হলে জলাতঙ্ক বা র‍্যাবিস নামক রোগের টিকা দেওয়া লাগতে পারে।

টিটেনাস এর টিকা না নেওয়া থাকলে যেকোনো বয়সের ব্যক্তি এটি নিতে পারে।

কাঁটা-ছেড়া প্রতিরোধে সাবধানতা 

কিছু সাবধানতা মেনে চললে কাটা-ছেঁড়ার সম্ভাবনা অনেকটুকু কমিয়ে আনা যায়। যেমন—

  • কাটা-ছেঁড়া থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছুরি, কাঁচি, ধারালো বস্তু, আগ্নেয়াস্ত্র ছোটো বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখুন। সঠিক বয়সের পর বাচ্চাদের এগুলোর নিরাপদ ব্যবহার শেখান।
  • খেলাধুলার সময় প্রয়োজনীয় পোশাক ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরুন।
  • খেয়াল রাখুন পরিধেয় জুতার তলা যেন শক্ত হয়। পেরেক কিংবা চোখা কোনো বস্তুর সংস্পর্শে আসলে জুতা যেন ছিঁড়ে বা ফুটো হয়ে না যায়। 
  • কোনো ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার আগে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পোশাক ও জুতা পড়ুন।
  • পিচ্ছিল কোনো পদার্থ মেঝেতে পড়লে দ্রুত মুছে ফেলুন।

·         রান্নাঘরে বা অন্য কোনো কাজ করতে গেলে ধারালো কিছুতে হঠা ৎ হাত-পা কেটে যেতে পারে। নিত্যদিনের সমস্যা এটি। কেটে যাওয়ার পর মূল করণীয় হলো রক্তপাত বন্ধ করা এবং সংক্রমণ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা। জেনে নিন, হঠা ৎ কেটে গেলে কী করবেন।

·         ১. একটা পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে কাটা স্থানটি চেপে ধরে রাখুন। টানা ২০ থেকে ৩০ মিনিট চাপ দিয়ে ধরে রাখলে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তপাত বন্ধ করে দেবে। এক টুকরো বরফ পেঁচিয়েও ধরে রাখতে পারেন। কাটা জায়গাটা উঁচু করে রাখুন। রক্ত বন্ধ হয়েছে কি না তা বারবার খুলে     দেখবেন না।

·         ২. রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে জায়গাটা ধুয়ে নিন। সাবান বা আয়োডিন ও আয়োডিনজাত অ্যান্টিসেপটিক অনেক সময় জ্বালা করে। তাই সাধারণ ট্যাপের পানিই ভালো।

·         ৩. ধোয়া হয়ে গেলে পাতলা স্তরে অ্যান্টিবায়োটিক মলম দিয়ে ঢেকে দিন। নিওমাইসিন বা এ জাতীয় মলম সব সময় বাড়িতে প্রাথমিক চিকি ৎসাসামগ্রী হিসেবে থাকা উচিত। এবার একটা পাতলা গজ বা ব্যান্ডেজ দিয়ে আটকে দিন।

·         ৪. সাধারণ গজ ব্যান্ডেজ বা স্টিকারযুক্ত ব্যান্ডেজ, যা-ই হোক, প্রতিদিন অন্তত একবার তা পরিবর্তন করতে হবে। যদি জায়গাটা ফুলে যায় ও লাল দেখায়, ব্যথা বেড়ে যায় বা ভিজে যেতে থাকে, জ্বর আসে, তবে চিকি ৎসকের পরামর্শ নিন।

·         ৫. আধঘণ্টা চেপে রাখার পরও রক্ত বন্ধ না হলে ক্ষত ছয় মিলিমিটার পুরু হলে সেলাই লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগে চলে যান।

·         ৬. ধাতব বস্তু, নোংরা বস্তু ইত্যাদি থেকে ক্ষত তৈরি হলে এক ডোজ টিটেনাস ইনজেকশন নিয়ে নিন। নোংরা বস্তু দিয়ে কাটলে অ্যান্টিবায়োটিকও খেতে হতে পারে।

৮) হার্ট অ্যাটাক হলে কী করবেন? জেনে নিন প্রাথমিক চিকিৎসা?

 

কাছের প্রিয়,মানুষের হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে অনেকেরই মাথা কাজ করে না। অথচ এই সময়ই মাথা ঠান্ডা রাখা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ঠান্ডা মাথায় রোগীকে যতটা ফার্স্ট এড দিতে পারবেন ঝুঁকি তত কমবে। এই সময় ঘাবড়ে গিয়ে দেরি করে ফেললে কিন্তু বিপদ আরও বাড়বে। জেনে নিন কী করবেন জরুরি সময়ে।

কী ভাবে বুঝবেন হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কিনা-

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ-

১। বুকে ক্রমাগত ব্যথা, ছড়িয়ে পড়তে পারে চোয়াল, কাঁধ, দাঁত, গলা, হাতে।

২। হঠাৎ পালস রেট খুব বেড়ে যাওয়া বা একেবারে কমে যাওয়া।

৩। অতিরিক্ত ঘাম

৪। বুকে মাঝখানে অস্বস্তিকর চাপ অনুভব করা, ভারী ভারী ভাব।

৫। শ্বাস ছোট হয়ে আসা।

৬। মাথা ঘোরা, জ্ঞান হারানো।

৭। বমি বমি ভাব।

এই অবস্থায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি। অবিলম্বে অ্যাম্বুলেন্স কল করুন বা ডাক্তারকে ফোন করুন। বাড়িতে নিজের গাড়ি থাকলে নিজেরাও নিয়ে যেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন রোগীর সঙ্গে সারাক্ষণ কেউ থাকে।

অ্যাম্বুলেন্স বা ডাক্তার আসার আগে কী ভাবে ফার্স্ট এইড দেবেন-

১। প্রথমেই রোগীকে রিল্যাক্সড অবস্থায় নিয়ে আসুন। দেওয়ালে হেলান দিয়ে মাটিতে বসান। ঘাড়, মাথা কাঁধ হেলান দিয়ে হাঁটু মুড়ে রোগীকে বসালে রক্তচাপ কমবে।

২। রোগীর যদি অ্যাসপিরিনে অ্যালার্জি না থাকে তবে অ্যাসপিরিন দিন। এই সময় ৩০০ গ্রাম অ্যাসপিরিন চিবিয়ে খেতে পারলে ধাক্কা অনেকটাই সামলানো যাবে।

৩। এই সময় রোগী শক পেতে পারেন। জীবনের ঝুঁকি রয়েছে বুঝতে পারলে শক পাওয়া খুব স্বাভাবিক।

৪। ক্রমাগত শ্বাস, পালস রেট ও রোগী কেমন সাড়া দিচ্ছেন তা চেক করতে থাকুন।

৫। রোগী যদি অজ্ঞান হয়ে যায় তবে সিপিআর-এর সাহায্য নিন।

) স্ট্রোক: যেসব পদক্ষেপ রোগীর জীবন বাঁচাতেপারে

  সময় মতো স্ট্রোকের চিকিতসা করলে মৃত্যুঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা এবং দ্রুত এর চিকিৎসা শুরু করা না গেলে রোগীকে পঙ্গুত্ব বরণের পাশাপাশি তার মৃত্যু পর্যন্ত পর্যন্ত হতে পারে।

অন্যদিকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া গেলে রোগীর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।

স্ট্রোক কিভাবে বুঝবেন?

স্ট্রোকের সাথে অনেকে হার্ট অ্যাটাককে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু দুটি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা।

স্ট্রোক মূলত মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত হানে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কের কোষগুলো মরে গেলে স্ট্রোক হয়।

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কারণ এই রক্তের মাধ্যমেই শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছায়।

কোন কারণে মস্তিষ্কের কোষে যদি রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায় বা ছিঁড়ে যায় তখনই স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।

সাধারণত ৬০-বছরের বেশি বয়সী রোগীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকলেও তবে ইদানীং তরুণ এমনকি শিশুরাও স্ট্রোকে আক্রান্ত আক্রান্ত হচ্ছেন।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে নারীদের তুলনায় পুরুষদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

স্ট্রোক তিন ধরনের হয়ে থাকে।

১. মাইল্ড স্ট্রোক, ২.ইসকেমিক স্ট্রোক ও ৩.হেমোরেজিক স্ট্রোক।

মাইল্ড স্ট্রোকে রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ সাময়িক বন্ধ হয়ে আবারও চালু হয়। এটি মূলত বড় ধরণের স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ।

ইসকেমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের ও শরীরের অন্যান্য স্থানের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধে।

হেমোরেজিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়ে রক্তপাত হয়।।

স্ট্রোক, মস্তিষ্কে কতোটা ক্ষতি করবে এটা নির্ভর করে এটি মস্তিষ্কের কোথায় ঘটেছে এবং কতোটা জায়গা জুড়ে হয়েছে, তার ওপর।

তবে এখানে সবচেয়ে জরুরি হল ‘সময়’। যদি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে মৃত্যুমুখ থেকে রোগীকে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগী যতো দ্রুত চিকিৎসা পাবে, ক্ষতির আশঙ্কা ততোই কমবে।

সচিকিৎসকেরা বলছেন, বাংলাদেশে গত ১০/১২ বছরে ৪০ বছরের নিচে এখন অনেকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে।

লক্ষণ দেখে দ্রুত ব্যবস্থা

স্ট্রোকের লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হয়। অনেকে স্ট্রোক হওয়ার কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে যান। এ কারণে আর চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের পরামর্শ, কারও মধ্যে স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপণ না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

স্ট্রোকের সাধারণ কিছু লক্ষণ হল:

  • আচমকা হাত, পা বা শরীরের কোনও একটা দিক অবশ হয়ে যাওয়া। হাত ওপরে তুলতে না পারা।
  • চোখে ঝাপসা/ অন্ধকার দেখা।
  • কথা বলতে অসুবিধা হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া।
  • ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া।
  • জিহ্বা অসাড় হয়ে, মুখ বেঁকে যাওয়া।
  • শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে পড়ে যাওয়া/জ্ঞান হারানো।
  • হঠাৎ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাজ পড়ার মতো তীব্র মাথাব্যথা।
  • বমি বমি ভাব, বমি, খিঁচুনি হওয়া।

লক্ষণ ও পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে চিকিৎসকরা একটি শব্দ মাথায় রাখতে বলেছেন। সেটা হল: FAST

এখানে F = Face মুখ বেঁকে যাওয়া, A = Arm হাত অবশ হয়ে আসা, S = Speech কথা জড়িয়ে যাওয়া বা এবং T = Time যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।

এ ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে বিছানায় বা মেঝেতে কাত করে শুইয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে না হলে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

রোগীকে বাতাস করতে হবে, অথবা আলো বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে। রোগীর আশেপাশে ভিড় করে কান্নাকাটি করা যাবে না।

গায়ে থাকা কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে যেমন: টাই, বেল্ট, স্কার্ফ, অন্তর্বাসের বাঁধন খুলে দিতে হবে যেন রোগী শ্বাস নিতে পারেন।

রোগী জ্ঞান হারালে তার মুখ খুলে দেখতে হবে কিছু আটকে আছে কিনা। ভেজা কাপড় দিয়ে মুখে জমে থাকা লালা, খাবারের অংশ বা বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে।

এ সময় রোগীকে পানি, খাবার বা কোন ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। কারণ একেক ধরণের স্ট্রোকের ওষুধ একেকরকম।

এছাড়া হাতে কানে লতিতে বা হাতের আঙ্গুলে সুঁচ ফুটিয়ে রক্ত বের করার যে ভাইরাল উপায় রয়েছে সেটার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন ডা. শফিকুল ইসলাম।

এসব করলে স্ট্রোকের প্রতিকার তো হবেই না বরং বরং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও রক্তে সংক্রামক ব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে বলে মনে করা হয়।

সম্ভব হলে আগের হাসপাতালে যাওয়ার সময় রোগীর যদি থাকে পূর্বের  চিকিৎসার ফাইলপত্র সাথে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা

১০) সাপে কাটার প্রাথমিক চিকিৎসা

সাপে কাটার সঙ্গে ‘আতঙ্ক’ শব্দটি জড়িয়ে আছে। গ্রামীণ জীবনে সাপে কাটার বিষয়টি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হলেও মে থেকে অক্টোবর মাসে তা বেড়ে যায়। তবে সাপে কাটলেই যে বিষক্রিয়া হবে, বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। অনেকের জানা, দেশে বিষধর সাপের চেয়ে নির্বিষ সাপের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু অপচিকিৎসা ও অজ্ঞতার কারণে আক্রান্ত মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয় না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ জন সাপের কামড়ের শিকার হয়। এদের মধ্যে বছরে মারা যায় ৬ হাজার ৪১ জন। আশঙ্কার বিষয় হলো, এর মধ্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ।

বিষধর সাপে কাটলে শরীরে বিষক্রিয়ার কিছু লক্ষণ দেখা যায়: ক্ষতস্থানে বিষদাঁতের দুটি দংশনের চিহ্নের উপস্থিতি, ক্ষতস্থান থেকে অনবরত রক্তপাত ও ক্ষতস্থান অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠা এবং প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করা, কখনো কখনো সারা শরীর ফুলে যাওয়া, খাবার ও ঢোক গিলতে অসুবিধা, শ্বাসকষ্ট, চোখে ঝাপসা দেখা ও চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসা, ঘুম ঘুম ভাব আসা, হাত-পা অবশ হয়ে আসা ও অচেতন হয়ে পড়া, ঘাড় সোজা রাখতে না পারা, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি।

এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে নিকটস্থ হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। সাধারণত নির্বিষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত স্থানে সামান্য ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা অল্প ক্ষত সৃষ্টি হয়ে থাকে। তবে এসব লক্ষণ থাকলেও ঝুঁকি নেওয়া ঠিক নয়, যেকোনো রোগীকেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। বিষধর সাপের কামড়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর মূল কারণ যথাযথ সচেতনতার অভাব। ওঝা বা বেদের মাধ্যমে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে চিকিৎসা করানো এবং রোগীকে হাসপাতালে আনতে বিলম্ব করা।

সাপে কাটা ব্যক্তিকে প্রথমে আশ্বস্ত করতে হবে যে তার ভয়ের কোনো কারণ নেই। এর বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা আছে। বেশির ভাগ সাপই নির্বিষ, এমনকি বিষধর সাপের পক্ষেও দংশনের সময় সব সময় প্রচুর পরিমাণ বিষ ঢেলে দেওয়া সম্ভব হয় না। এ জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাহস দেওয়া প্রয়োজন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতালে দ্রুত নিতে হবে। হাসপাতালে স্থানান্তরের সময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাঁটতে না দিয়ে কাঁধে, খাটিয়ায় বা কোনো যানবাহনের সাহায্যে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সম্ভব হলে সাপটি দেখতে কেমন, তা লক্ষ করা। সাপের বর্ণনা চিকিৎসককে চিকিৎসা পরিকল্পনায় সাহায্য করতে

দংশিত স্থান কিছুতেই কাটাছেঁড়া করা উচিত নয়। কেবল ভেজা কাপড় দিয়ে কিংবা জীবাণুনাশক মলম দিয়ে ক্ষতস্থান মুছে দিতে হবে। আক্রান্ত স্থান থেকে মুখের সাহায্যে রক্ত বা বিষ টেনে বের করার চেষ্টা করা বা ক্ষতস্থানে গোবর, শিমের বিচি, আলকাতরা, লালা, ভেষজ ওষুধ বা কোনো প্রকার রাসায়নিক লাগানো উচিত নয়। দংশন করা স্থান থেকে ওপরের দিকে একটি লম্বা কাঠ এবং গামছা বা কাপড় দিয়ে কেবল একটি বাঁধন এমনভাবে দিতে হবে, যেন তা খুব আঁটসাঁট বা ঢিলে কোনোটাই না হয় এবং একটি আঙুল একটু চেষ্টায় বাঁধনের নিচ দিয়ে যেতে পারে। কারণ, খুব বেশি শক্ত করে বাঁধলে আক্রান্ত অঙ্গে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেহেতু মাংসপেশির সংকোচনে বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তাই সাপে কাটার স্থান বেশি নড়াচড়া করা উচিত নয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বমি করানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ কিংবা কানের ভেতর বা চোখের ভেতর কিছু ঢেলে দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। আশপাশের মানুষের একটু সচেতনতা ও বিজ্ঞানমনস্কতাই সাপে কাটা রোগীর প্রাণ ফিরিয়ে দিতে অনেকাংশে সাহায্য করবে।

১১)মাকড়সার কামড়: যেসব তথ্য আপনার জানা প্রয়োজন

সামগ্রিক ধারণা: মাকড়সার কামড়ের ফলে সৃষ্ট চিকিৎসাযোগ্য ক্ষতির কারণে মাকড়সা প্রায়ই আমাদের কাছে অস্বস্তির ও ভয়ের উৎস। মাকড়সার কামড় অস্বাভাবিক এবং সাধারণত কামড়ের জায়গায় শুধুমাত্র লালচে ভাব, ফোলাভাব এবং ব্যথা হয়। মাকড়সার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপয়াস্বরূপ কিছু সহজ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

মাকড়সার কামড় কি বিপজ্জনক? বেশিরভাগ মাকড়সার কামড় খুব কমই কোনো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে। এরা সাধারণত নিরীহ এবং খুব কম মাকড়সারই মানুষের ত্বকে প্রবেশ করার জন্য উপযোগী লম্বা দাঁত থাকে৷ শুধুমাত্র কয়েক প্রকার মাকড়সার প্রজাতি যেমন উইডো মাকড়সা যেগুলি প্রায় ৩০ প্রজাতির এবং রিক্লোস মাকড়সা যার বিশ্বব্যাপী ১৪০ টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে যাদের কামড় মাথাব্যথার মতো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করা ছাড়াও বেদনাদায়ক পেশী বাধা, এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। মাকড়সার কামড়ের গুরুতর লক্ষণগুলি মাকড়সা দ্বারা প্রবেশকৃত বিষের ফলে হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। মাকড়সা বিষ তৈরি করে, তবে তাদের দাঁতগুলি মানুষের ত্বকে প্রবেশ করার পক্ষে খুব ছোট। মাকড়সার কামড়ের কারণে আক্রান্ত স্থানে ব্যথা, লালভাব এবং ফোলাভাব হতে পারে।

লক্ষণ উপসর্গ: একটি মাকড়সার কামড় ফোলা, প্রদাহ এবং লালভাব সৃষ্টি করতে পারে অন্যান্য পোকার কামড়ের মতোই ত্বকে লালভাব,  চুলকানি এবং বেদনাদায়ক ফুসকুড়ি দেখা যায়। মাকড়সার কামড়ের অন্যান্য গুরুতর উপসর্গগুলি (যেমন কালো উইডো থেকে) হল পেটে কামড়ানো, ঘাম দেওয়া, বমি বমি ভাব, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, ত্বকে ফোসকা এবং ব্যথা।

 একটি মাকড়সা কাকে কামড়াতে পারে?:কিছু মানুষের পেশা এবং কার্যকলাপের কারণে তাদের। মাকড়সার কামড় খাওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। তবে যে কেউ সহজেই মাকড়সার সংস্পর্শে আসতে পারে। পর্বতারোহী, দারোয়ান, মেশিন পরিচালক, আউটডোর কর্মী, বাইরে খেলা করে এরকম শিশুরা, কৃষকরা এবং গ্রাউন্ডকিপারদের মতো ব্যক্তিরা বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে আসার কারণে মাকড়সার কামড় খাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।

ঝুঁকির কারণগুলি জানুন:কালো উইডোর মতো বিপজ্জনক মাকড়সা সাধারণত গ্যারেজ, বাগানের অব্যবহৃত পাত্র, পায়খানা, ছায়াযুক্ত এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় আলমারিতে পাওয়া যায়। এরা অন্ধকারময় ও শুকনো জায়গায় থাকতে পছন্দ করে।

 কোন পরিস্থিতিতে একজন ডাক্তার দেখাবেন?:আপনি যদি মাকড়সার কামড়ের গুরুতর উপসর্গগুলি অনুভব করেন, যেমন জ্বর, ঠান্ডা লাগা, অস্থিরতা এবং ক্লান্তি অনুভব করা তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার লক্ষণগুলি বাড়লে অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা নিন। আপনি অ্যাপোলো হাসপাতালে জরুরী পরিষেবা সর্বদাই পাবেন।

মাকড়সার কামড়ের জটিলতাগুলি কী কী?:বিপজ্জনক মাকড়সার কামড়ের ফলে ক্ষত এবং ঘা হতে পারে যা প্রায়শই নিরাময় করা কঠিন। শিশু এবং বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। 

মাকড়সার কামড়ের জটিলতাগুলি হল:

১. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়

২. হৃদপিণ্ডজনিত সমস্যা

৩. গুরুতর পেশীর যন্ত্রনা

  ব্যাথা

   বমি বমি ভাব এবং বমি

ঘায়ে সংক্রমণের লক্ষণ

 কামড়ের অঞ্চল থেকে হলুদ স্রাব নির্গমন ।

মাকড়সা আপনাকে কামড়ালে আপনার কি করা উচিত?

মাকড়সার কামড়ালে  স্বাভাবিক প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা অনুসরণ করুন। বেশিরভাগ মাকড়সার কামড়ে চিকিৎসা বাড়িতেই করা সম্ভব। আপনার ত্বক থেকে হুলটি সরান।

·         উষ্ণ জল এবং সাবান দিয়ে কামড়ের স্থানটি ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন।

·         ফোলা কমাতে একটি আইস প্যাক বা ঠান্ডা কাপড় প্রয়োগ করুন।

·         ব্যথা মোকাবিলায় টপিকাল অ্যান্টি-হিস্টামিন ক্রিম এবং মুখগহ্বর দ্বারা গ্রহণ করা হয় এমন যন্ত্রনা উপশমকারী ট্যাবলেট নিন।

·         দিনে কয়েকবার লবণ জলের দ্রবণে কামড়ের জায়গাটি ভিজিয়ে রাখুন।

·         ত্বককে সংক্রমণ বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করতে পোভিডোন-আয়োডিন দিয়ে মাকড়সার কামড়ের স্থানটি পরিষ্কার করুন।

আপনার ক্ষত বা ঘা গভীর হলে বা আপনার  লক্ষণগুলি বেশি থাকলে অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা নিন।

কীভাবে আপনি নিজেকে মাকড়সার কামড় থেকে রক্ষা করতে পারেন?

মাকড়সার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে যা করবেন:

১.মাকড়সা যাতে বসবাস করতে না পারে সে জন্য ছায়াযুক্ত স্থান, গ্যারেজ এবং বেসমেন্ট নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

   ২.  মাকড়সা যে জায়গাগুলির মধ্যে তাদের চিহ্ন খুঁজে পেতে না পারে সেই হিসাবে আপনার আশেপাশের পরিচ্ছন্নতা সুনিশ্চিত করুন।

৩. মাকড়সাকে ​​দূরে রাখতে DEET-এর মতো পোকামাকড় নিরোধক ব্যবহার করুন।

৪. বাইরে বা বাগানে কাজ করার সময় লম্বা হাতা, লম্বা প্যান্ট, মোজা গুঁজে রেখে, বুট এবং গ্লাভস পরে সতর্কতা অবলম্বন করুন।

  মাকড়সা তাড়াতে পোশাকে পারমেথ্রিন ছিটিয়ে পোশাক পরুন।

 উপসংহার: পুনরায় প্রবেশ রোধ করতে মাকড়সার জালগুলি বিনষ্ট করুন।বেশিরভাগ মাকড়সার কামড় ক্ষতিকারক নয়। একটি কামড়ে লালভাব, চুলকানি এবং বেদনাদায়ক ছোট ফোঁড়া সৃষ্টি হতে পারে। যদি একটি বিপজ্জনক প্রজাতির মাকড়সা আপনাকে কামড়ায় এবং উপসর্গগুলি গুরুতর হয় তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হোবো, ব্রাউন রেক্লুস এবং ব্ল্যাক উইডোর মত মাকড়সাগুলির কামড়ের ফলে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, বমি বমি ভাব ও বমি, জ্বর এবং ঠান্ডা লাগার মত ক্ষতিকারক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

১২) ভিমরুল মৌমাছি  হুল ফোটালে কি করবেন?

 ভিমরুল বা মৌমাছি হুল ফোটানোর পর আক্রান্ত স্থানটিতে বরফ ডলুন। কিছুক্ষণ পর সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম লাগান। ক্রিম লাগানোর পাশাপাশি অ্যান্টি হিস্টামিন ওষুধ খান। ব্যথা বেশি হলে খেতে পারেন প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ যা আপনার প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে দেয়া আছে

 ভিমরুল বা মৌমাছিকে বিরক্ত করলে তো কথাই নেই, অনেক সময় বিরক্ত করা ছাড়াই মৌমাছি এবং বোলতার কাছে আমাদের নাজেহাল হতে হয়। ভয় পেলে হুল ফুটিয়ে এলাকা ছাড়া করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হুল ফোটানো বিপজ্জনক না-হলেও কারও যদি এলার্জি থাকে তাহলে ক্ষতিকর হতে পারে। বড়দের তুলনায় শিশুদের মৌমাছি বা বোলতা হুলে প্রতিক্রিয়া হয় বেশি।

এই সময় পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মৌমাছি কিংবা বোলতা হুল ফোটালে কী করতে হবে। চলুন জেনে নেই।

১. মৌমাছি বা বোলতা হুল ফুটিয়ে চামড়ার ওপর বসে থাকলে তা তুলে ফেলুন। এরা সাধারণত ত্বকের সঙ্গে একই সমতলে আঁকড়ে ধরে থাকে। তাই সরানোর জন্য ধীরে ধীরে এদের ওপরে এবং পাশে আঙুল বোলান, তারপর আচমকা ঠেলে ফেলে দিন।

২. খামচে বা চিমটি কেটে মৌমাছি অথবা বোলতাকে তোলার চেষ্টা করবেন না। কারণ এর ফলে বিষের থলি থেকে সব বিষ বেরিয়ে পড়বে এবং হুলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করবে।

৩. হুল ফোটানোর পর আক্রান্ত স্থানটিতে বরফ ডলুন। কিছুক্ষণ পর সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম লাগান। ক্রিম লাগানোর পাশাপাশি অ্যান্টি হিস্টামিন ওষুধ খান। ব্যথা বেশি হলে খেতে পারেন প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ।

৪. হুল ফোটানোর কারণে মাথাব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অন্যদিকে আক্রান্ত স্থানে চুলকাতে পারে, চাকা হয়ে ফুলে যেতেও পারে। এমনকি শরীর ফুলে যাওয়া ও পেটে তীব্র ব্যথা হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এ ছাড়া কিছু ঘরোয়া উপায় আছে, যাতে উপসর্গগুলো কমে যেতে পারে। যাঁদের অবস্থা গুরুতর নয় এবং ওষুধ খেতে চাইছেন না, তাঁরা এই উপায় অবলম্বনে স্বস্তি পেতে পারেন।

.

১৩) কুকুর কামড়ালে করণীয় ও প্রাথমিক চিকিৎসা

কুকুরের কামড় খাওয়ার মত দুর্ঘটনা যে কারো সাথেই ঘটতে পারে। কুকুরের কামড় থেকেই জলাতঙ্ক রোগের সৃষ্টি। রেবিস নামক ভাইরাসের কারণে স্নায়ুজনিত রোগ জলাতঙ্ক হয়। তবে সব কুকুরে কামড়ালেই জলাতঙ্ক রোগ হয় না। কিন্তু জলাতঙ্ক রোগের ভয়াভহতার কারণে যেকোন কুকুরের কামড়কে অনেক বিপদজনক হিসাবে ভাবা হয়। কুকুর কামড়ালে রেবিস ভাইরাস কুকুরের লালা থেকে ক্ষতস্থানে লেগে যায়, আর ক্ষতস্থান থেকে স্নায়ুতে ভাইরাস পৌঁছে জলাতঙ্ক রোগের সৃষ্টি করে। জলাতঙ্ক হলে মস্তিষ্কে প্রদাহ এবং এর সাথে খাদ্যনালী তীব্র সংকোচন হয়। এমন রোগী কোন কিছুর শব্দ বা আলো সহ্য করতে পারে না। কুকুর কামড়ালে সাথে সাথেই প্রাথমিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নিলে সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করা থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

#ক্ষত পরিষ্কার করুন

একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে ক্ষতের স্থানটি চেপে ধরুন। তারপর কুকুরের কামড় দেওয়া স্থানে ১৫-২০ মিনিট পর্যুন্ত পরিষ্কার পানি ঢেলে পরিষ্কার করুন। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করা ভাল।এতে ক্ষতিকর ভাইরাস ক্ষত স্থানে লেগে থাকলে তা নষ্ট হয়ে যাবে। তবে ক্ষত পরিষ্কার করার সময় খুব বেশি ঘষাঘষি করবেন না।

#রক্ত বন্ধ করুন

ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পরা বন্ধ করতে হবে, সেই জন্যে ক্ষত স্থানে চাপ দিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখুন। এতে রক্ত পরা বন্ধ হয়ে যাবে।

#ব্যান্ডেজ

 আপনার প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে দেয়া সামগ্রীর মাধ্যমে ক্ষতস্থানটিতে অ্যান্টিবায়েটিক ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নিন। তারপর একটি গজ কাপড় দিয়ে ভাল করে ব্যান্ডেজ করে ফেলুন। ক্ষত স্থান খোলা থাকলে এতে বিভিন্ন রোগ জীবাণু প্রবেশ করতে পারে।

#ডাক্তারের কাছে যাওয়া

প্রাথমিক চিকিৎসার পর যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ‘জিরো আওয়ার’ মানে যত দ্রুত সম্ভব টিকা দিতে হবে। যত দ্রুত টিকা দেওয়া হবে ততই ঝুঁকিমুক্ত থাকা যাবে। দেখা গেছে অসচেতনতাই জলাতংক ছড়ানোর জন্য অনেকাংশে দায়ী। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ‍রেবিস ভ্যাকসিন দিন। কুকুর কামড়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ইনজেকশন দেওয়া উচিত।

#সতর্কতা

কুকুরের কামড়ে অনেক সময় রোগী মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। তার ভীতি দূর করতে হবে। তেমন কিছুই হবেনা সে আবার সুস্থ হয়ে যাবে এইভাবে বলে তাকে আস্থা প্রদান করতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর অব্যশই রোগীকে ডাক্তার কাছে নিয়ে যেতে হবে।

১৪)কারও গলায় খাবার আটকে গেলে তাঁর প্রাণ বাঁচাতে পারেন আপনিও, জেনে নিন কী ভাবে?

এই সমস্যা মোকাবিলার উপায় আছে। চিকিৎসকরা জানলেও সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার নয়।রেস্তঁরায় খাবার খেতে খেতে জমিয়ে গল্প করছিলেন বন্ধুরা। আচমকা এক জনের মুখ লাল হয়ে দম আটকে এল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ। সম্প্রতি কলকাতার এক রেস্তঁরায় এমন পরিস্থিতির সামনে পড়ে হতচকিত হয়ে পড়েছিলেন একদল কলেজ পড়ুয়া ও তাঁদের চেনা জানা কিছু মানুষ। মৃত ছেলেটির পরিজনেরা ঘটনার আকস্মিকতায় স্তম্ভিত! ঘটনাটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমন দুর্ঘটনা নতুন নয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি ২ ঘণ্টায় ১ জন মানুষ গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে গিয়ে স্রেফ দম বন্ধ হয়ে মারা যান। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে চোকিং।
শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সৌমিত্র দত্ত জানালেন, ‘‘গলায় খাবার আটকে যাওয়ার সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় শিশু আর বয়স্ক মানুষের মধ্যে। ৫ বছরের নীচে ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি। তাড়াহুড়ো করে খাবার খেতে গিয়ে বা খাওয়ার সময় কথা বলতে গিয়ে দম আটকে খুব কষ্টকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। খাবার শুকনো ও শক্ত হলে গলায় আটকে যাবার আশঙ্কা বাড়ে। তাই ছোট ছোট গ্রাসে খাবার খান ও খাওয়ার সময় কথা কম বলুন।’’ তবে এই সমস্যা মোকাবিলার উপায় আছে। কিন্তু বাধ্যতামূলক ভাবে তার প্রয়োগ আমাদের দেশে নেই। চিকিৎসকরা জানলেও সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টি অপরিষ্কার। অ্যামেরিকান থোরাসিক সার্জন হেনরি জে হেইমলিচ ১৯৭৪ সালে গলায় খাবার আটকে যাওয়ার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সম্পর্কে একটি উপায় জানিয়েছিলেন। এর সাহায্যে মানুষকে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যায়। পদ্ধতিটির নাম ‘হেইমলিচ ম্যানিউভার’।
শ্বাসনালীর মুখে খাবার আটকে গেলে অক্সিজেন চলাচল খুব কমে যায়। এমনকি পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত আটকে যাওয়া খাবারের টুকরো বের না করে দিলে রোগীকে বাঁচানো যায় না। কোনও মানুষকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে দেখলে হেইমলিচ ম্যানেউভারের সাহায্যে তাঁকে সুস্থ করে তোলা যায়, বললেন চট্টগ্রামের ইম্পেরিয়াল নারায়ানা কার্ডিয়াক সেন্টারের থোরাসিক সার্জন বিনায়ক চন্দ। অসুস্থ মানুষটিকে পিছন থেকে জড়িয়ে দুই হাত দিয়ে পেটের ওপরের দিকে জোরে জোরে চাপ দিলে শ্বাসনালীতে আটকে থাকা খাবার বেরিয়ে আসে। চিকিৎসক হেইমলিচ ৯৪ বছর বয়সে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বৃদ্ধাবাসে থাকা সমবয়সী কয়েক জনের প্রাণ বাঁচান। ইউটিউব বা ইন্টারনেটে খুঁজলে এমন ভিডিয়ো পাওয়া যায়। যা থেকে সহজেই শিখে নেওয়া যেতে পারে এই পদ্ধতি। শ্বাসনালীতে কিছু আটকে গেলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে অ্যাস্পিক্সিয়া। শ্বাসনালী একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক অক্সিজেনের অভাবে কাজ করতে পারে না। অবস্থা সংকটজনক হয়ে ওঠে। একে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে অ্যানোক্সিয়া। রেস্তঁরায় খেতে গিয়ে কলেজ পড়ুয়ার ক্ষেত্রে যা হয়েছিল। তবে এই ঘটনা নতুন নয়। ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম বাঙালি এয়ারমার্শাল সুব্রত মুখোপাধ্যায় ১৯৬০ সালে জাপানের টোকিও শহরে এক নামী রেস্তোরাঁয় বন্ধুর সঙ্গে ডিনার করতে গিয়ে গলায় খাবার আটকে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ গলায় খাবার আটকে প্রায় মৃত্যুর মুখে পৌঁছে গিয়েছিলেন। বেসবল খেলোয়াড় জিমি ফক্স বা নাট্যকার টেনিসি উইলিয়ামের পরিণতিটা ভয়াবহ হয়। গল্পগুজব করতে করতে খাবার সময় গলায় মাংসের হাড় আটকে মারা গিয়েছেন দু’জনেই। খাবার হোক বা অন্য কিছু— শ্বাসনালীতে আটকে গেলে প্রথমেই মানুষটির নিঃশ্বাসের কষ্ট হবে। কাশি, বুকের মধ্যে হাওয়ার শব্দ, বমি বমি ভাব, কথা বলতে না পারা, এ ঠোঁট নীল জ্ঞান হারানোর মত সমস্যা এর পর হতে পারে। ৭ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা মুশকিল হবে।
খাবার আটকে গেলে পিঠে চাপড় মেরে খুব ভাল কাজ হয় না। বরং হেইমলিচ ম্যানিউভার পদ্ধতিতে রোগীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ডায়াফ্রাম অর্থাৎ পেট ও পাঁজরের সংযোগস্থলে দু’হাতে জোরে ধাক্কা দিলে আটকানো খাবারের টুকরো বেড়িয়ে আসে। এ ভাবে অনেকের প্রাণ বাঁচানো যায়

১৫)শ্বাসকষ্ট – প্রাথমিক চিকিৎসা

 শিরভাগ মানুষই শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। নির্দিষ্ট কিছু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে এই নিবন্ধটি অপ্রত্যাশিত বা আকস্মিক শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছে এমন কারো জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১.শ্বাসকষ্ট হচ্ছে

২.গভীর শ্বাস নিতে না পারা এবং বাতাসের জন্য হাঁপাচ্ছে

 ৩. মনে হচ্ছে আপনি পর্যাপ্ত বাতাস পাচ্ছেন না

# বিবেচনা

শ্বাসকষ্ট প্রায়ই একটি মেডিকেল জরুরী। একটি ব্যতিক্রম হল ব্যায়ামের মতো স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ থেকে কিছুটা দূরে থাকা।

# কারণসমূহ

শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে কিছু স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং হঠাৎ চিকিৎসা জরুরী অবস্থা।কিছু স্বাস্থ্য শর্ত যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে:রক্তাল্পতা (লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম)

  ১.হাঁপানি

  ২.ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) , কখনও কখনও এম্ফিসেমা বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস বলা হয়

  ৩.হৃদরোগ বা হার্ট ফেইলিউর

  ৪.ফুসফুসের ক্যান্সার , বা ক্যান্সার যা ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছে

  ৫.নিউমোনিয়া , তীব্র ব্রঙ্কাইটিস, হুপিং কাশি , ক্রুপ এবং অন্যান্য সহ শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ

  ৬.শর্ত যা বুকের প্রাচীর বা ডায়াফ্রামের চলাচলকে সীমাবদ্ধ করে

  ৭.নির্দিষ্ট নিউরোলজিক অবস্থা

   ৮.ফুসফুসে রক্ত ​​জমাট বাঁধা.ইত্যাদি

# লক্ষণ

যাদের শ্বাসকষ্ট হয় তাদের প্রায়ই অস্বস্তিকর দেখায়। 

যেমন: 

১.দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে

২.শুয়ে শ্বাস নিতে অক্ষম এবং শ্বাস নিতে বসতে হবে

৩.খুবই উদ্বিগ্ন ও উত্তেজিত

৪.ঘুমন্ত বা বিভ্রান্ত

তাদের অন্যান্য উপসর্গ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

১.মাথা ঘোরা বা হালকা মাথাব্যথা

২.জ্বর

৩.কাশি

৪.বমি বমি ভাব বমি

৫.নীলাভ ঠোঁট, আঙুল এবং নখঅস্বাভাবিকভাবে বুক নড়ছে

৬.গুড়গুড় করা, হুইজিং বা শিস দেওয়ার শব্দ করা

৭.কণ্ঠস্বর বা কথা বলতে অসুবিধা

৮.রক্ত কাশি

৯.দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন

১০.ঘাম

যদি অ্যালার্জির কারণে শ্বাসকষ্ট হয়, তবে তাদের মুখ, জিহ্বা বা গলায় ফুসকুড়ি বা ফোলাভাব থাকতে পারে।

যদি কোনও আঘাতের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়, তবে তাদের রক্তপাত হতে পারে বা দৃশ্যমান ক্ষত হতে পারে।

প্রাথমিক চিকিৎসা-

যদি কারো শ্বাসকষ্ট হয়, অবিলম্বে ৯৯৯ বা আপনার স্থানীয় জরুরি নম্বরে কল করুন, তারপর:ব্যক্তির শ্বাসনালী, শ্বাস এবং নাড়ি পরীক্ষা করুন। প্রয়োজনে CPR শুরু করুন ।

যেকোনো আঁটসাঁট পোশাক ঢিলা করুন।

ব্যক্তিকে যে কোনো নির্ধারিত ওষুধ (যেমন অ্যাজমা ইনহেলার বা হোম অক্সিজেন) ব্যবহার করতে সাহায্য করুন।

·         চিকিৎসা সহায়তা না আসা পর্যন্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস এবং নাড়ি পর্যবেক্ষণ করা চালিয়ে যান। অনুমান করবেন না যে ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি হচ্ছে যদি আপনি আর অস্বাভাবিক শ্বাসের শব্দ শুনতে না পান, যেমন শ্বাসকষ্ট।

·         যদি ঘাড়ে বা বুকে খোলা ক্ষত থাকে, তবে সেগুলি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, বিশেষ করে যদি ক্ষতস্থানে বায়ু বুদবুদ দেখা যায়। এই ধরনের ক্ষত একবারে ব্যান্ডেজ করুন।

·         একটি “চুষা” বুকের ক্ষত প্রতিটি শ্বাসের সাথে ব্যক্তির বুকের গহ্বরে বাতাস প্রবেশ করতে দেয়। এর ফলে ফুসফুস ভেঙে যেতে পারে । প্লাস্টিকের মোড়ক, একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ, বা পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে ঢেকে গজ প্যাড দিয়ে ক্ষতটি ব্যান্ডেজ করুন,যা আপনার প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে  আছে এটিকে তিন দিকে সিল করুন, একপাশ বন্ধ করে রাখুন। এটি একটি ভালভ তৈরি করে যাতে ক্ষত দিয়ে বুকে প্রবেশ করা থেকে বায়ু রোধ করা যায়, যখন আটকা পড়া বাতাসকে বুক থেকে সিল না করা পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেয়।

·         ব্যক্তিকে খাবার বা পানীয় দিন।

·         মাথা, ঘাড়, বুকে বা শ্বাসনালীতে আঘাত লাগলে ব্যক্তিকে সরান, যদি না এটি একেবারে প্রয়োজন হয়। ঘাড় রক্ষা করুন এবং স্থিতিশীল করুন যদি ব্যক্তিকে অবশ্যই সরানো হয়।

·         ব্যক্তির মাথার নীচে একটি বালিশ রাখুন। নইলে শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

·         চিকিৎসা সহায়তা পাওয়ার আগে ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি হয় কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করুন। অবিলম্বে সাহায্য চান

১৬)নাক দিয়ে রক্ত পরলে কি করবেন?

কারও কারও হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। অনেকেই খুব ভয় পান। ভয় না পেয়ে বরং কিছুক্ষণ নিয়ম মেনে নাক চেপে ধরে রাখলে সাধারণত রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। তবে রক্তপাতের কারণ খুঁজে বের করা উচিত। কারণ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে পরবর্তী সময়ে রক্ত পড়ার আশঙ্কা অনেকাংশে থাকে না। নাকে অনেক রক্তনালি থাকে, যা নাকের ঝিল্লি আবরণে এমনভাবে থাকে একটু আঘাত লাগলেই রক্তপাত হতে পারে। সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়ায় এ সমস্যা বেশি হতে পারে।

নাক দিয়ে নানা কারণে রক্ত পড়তে পারে। নাকের ঝিল্লি আবরণী খুবই পাতলা এবং রক্তনালিগুলোও অগভীর হওয়ায় সামান্য আঘাতে বা অন্য সমস্যায়ও সহজেই রক্তপাত হয়ে থাকে। তবে কারণ খুঁজে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ উচিত।

# কেন নাক দিয়ে রক্ত পড়ে?

কোনোভাবে নাকে বা নাকের ভেতরে আঘাত পেলে, নাকের বা সাইনাসের সংক্রমণ অথবা নাকের বিভিন্ন টিউমার; ইনফেকশন, ট্রমা, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, নন-অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাদক সেবন ও বংশগত কিছু রক্তের সমস্যাও নাক থেকে রক্ত পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি করে। তবে এসব ক্ষেত্রে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার পাশাপাশি অন্যান্য উপসর্গ থাকে। নাকের ঝিল্লি শুকিয়ে গেলে, ফেটে গেলে বা সেখানে শক্ত আবরণ সৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবেই নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে। রক্ত জমাটবাঁধা দূর করার ওষুধ গ্রহণ করলে নাক থেকে রক্ত নির্গত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আবার বৃদ্ধ বয়সে রক্তনালির সংকোচন প্রসারণশীলতা কমে যাওয়ার কারণেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।

# কী করবেন?

নাক দিয়ে রক্ত পড়লে সোজা হয়ে একটু সামনের দিকে ঝুঁকে চেয়ারে বসে পড়ুন। বৃদ্ধাঙ্গুল ও শাহাদত আঙুল দিয়ে নাকের দুই ছিদ্র জোরে বন্ধ করুন। মুখ দিয়ে শ্বাস নিন। এভাবে ১০ মিনিট ধরে রাখুন। এ সময় আঙুল ছাড়বেন না, প্রয়োজন হলে আরও বেশিক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। এ সময় সম্ভব হলে কপালে, নাকের চারপাশে বরফ ধরে রাখুন। তাহলে রক্ত পড়া তাড়াতাড়ি বন্ধ হবে। যদি রক্ত ১৫-২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে পড়তে থাকে, তবে দেরি না করে পাশের হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগে চলে যান। নাকে আঘাতজনিত রক্ত পড়া বন্ধ হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ নাকের হাড় ভেঙেছে কি না, তা দেখা জরুরি। বারবার রক্ত পড়লে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।

# সাবধানতা

রক্ত পড়াকালে শোবেন না। এতে রক্ত ফুসফুসে গিয়ে জটিল সমস্যা করতে পারে। রক্ত পড়া বন্ধ হলেও কয়েক ঘণ্টা নাক পরিষ্কার করবেন না, সামনে ঝুঁকে মাথা হৃৎপিণ্ডের নিচের লেভেলে আনবেন না। এতে আবার রক্ত পড়া শুরু হতে পারে।

শিশুদের নখ ছোট রাখতে হবে এবং নাকে হাত দেওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে নাক যাতে অতিরিক্ত শুষ্ক না হয়, তার জন্য নাকের সামনের দিকে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে।

# প্রাথমিক চিকিৎসা 

নাক দিয়ে রক্ত পড়লে এর কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা রয়েছে। 

১. নাক দিয়ে হঠাৎ রক্ত পড়লে চেয়ারে সোজা হয়ে বসে থেকে মাথাটা সামনের দিকে সামান্য হেলে থাকুন। এতে রক্ত পেছন দিক দিয়ে গলায় বা পেটে চলে না যায়। 

২. হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দ্বারা নাকের সামনের অংশ ৫-১০ মিনিট চেপে ধরুন। মুখ দিয়ে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিন। রক্ত পেছনের দিকে গেলে গিলবেন না। মুখে চলে এলে থুতু দিয়ে গামলায় ফেলুন। 

৩. রুমাল বা তাওয়াল দিয়ে পেছিয়ে নাকের ওপরের অংশে বা দুই ভ্রুর মাঝে একটু নিচে চেপে ধরুন।

প্রাথমিক চিকিৎসায় রক্ত পড়া বন্ধ না হলে নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। 

 

১৭) কান দিয়ে রক্ত পড়লে করনিয়?

মানুষের শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গগুলোর মধ্যে কান অন্যতম। অথচ কানের রোগ বিষয়ে আমরা খুব একটা সচেতন নই। সামান্য কারণেই কানে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। অসাবধান হলে সেসব রোগ খুবই গুরুতর হয়ে দেখা দিতে পারে মানুষের জন্য। আবার একটুখানি সচেতন হলেই এড়ানো যায় কানের অনেক রোগ। সচেতনতা আসলে রোগ প্রতিরোধের প্রাথমিক পদক্ষেপ।

#  কানে ব্যথা: কানের ডাক্তারদের কাছে আসা রোগীদের একটা বিশাল অংশ আসেন কানে ব্যথার সমস্যার জন্য। কানের ব্যথা ব্যাপারটাকে যতটা সামান্য মনে হয়, বাস্তবে তা ততটা সামান্য নয়। অনেক সময় রোগী বা রোগীর স্বজনদের দেওয়া তথ্য অপূর্ণ হওয়ায় বা পারিপার্শ্বিকতার কারণে চিকিৎসকের জন্য কানে ব্যথার আসল কারণ নির্ণয় করা কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

কানে ব্যথা সাধারণত কানের সমস্যার কারণে হতে পারে বলে আমাদের মনে হলেও, বাস্তবে কান ছাড়াও অন্যান্য অনেক কারণে কানে ব্যথা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কান পরীক্ষা করে দেখা যায় আক্রান্ত ব্যক্তির কান সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।

সাধারণত আচমকা কানে ব্যথা শুরু হয় কানের ভেতরকার রাস্তায়—যাকে এক্সটার্নাল অডিটরি ক্যানাল বলা হয়। সেখানে যদি ব্রণের মতো হয় (ফারাংকুলোসিস) তাহলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। বিশেষ করে খাবার চিবানো বা হাই তোলার সময় ব্যথার তীব্রতা বাড়ে। তীব্র ব্যথা হওয়ার আরেকটি কারণ হলো মধ্যকর্ণের সংক্রমণ। অনেক সময় রোগী বলতে পারেন যে কানে প্রচণ্ড ব্যথা এবং ব্যথাটা দপ দপ করছে। খাবার বা পানি গেলার সময় ব্যথার তীব্রতা বাড়ে। এটা অনেক ক্ষেত্রে নিজ থেকে সেরে যায়। সে ক্ষেত্রে রোগী জানান যে তীব্র ব্যথা থাকার পর হঠাৎ ব্যথা কমেছে কিন্তু কান থেকে পানি পড়ছে। এ সমস্যায় ক্ষেত্র বিশেষে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। মধ্য কর্ণের সংক্রমণের কারণেও কানে ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া কানে আঘাত, চড়, আচমকা পুকুরে ঝাঁপ, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ, যেমন—বাজি, পটকার আওয়াজ, গাড়ির হর্ন ইত্যাদির কারণেও কানে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।

দীর্ঘদিনের সংক্রমণ থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তবে সেটার শুরু হয় ধীরে ধীরে। এ ব্যথা প্রচণ্ড হতে কিছুটা সময় নেয়। মধ্যকর্ণের ক্যানসারের ব্যথা শুরু হতেও সময় নেয়। মধ্যকর্ণের সংক্রমণের ব্যথা, কানের চামড়ার একজিমার সংক্রমণ, কানের জমে থাকা খৈল ইত্যাদির কারণে হওয়া ব্যথা খুব একটা তীব্র হয় না। তবে এগুলো থাকা অবস্থায় কানে পানি ঢুকলে তারপর ব্যথার তীব্রতা বাড়ে।

এ ছাড়া দাঁতের বিভিন্ন সমস্যার কারণেও কানে ব্যথা হতে পারে। যেমন—দাঁতের ক্ষয় (ক্যারিস), মাড়ির দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা, দাঁত খাঁজে খাঁজে না বসা ইত্যাদি। মুখের ভেতরকার নানারকম ঘা, মাড়ির সমস্যা, জিহ্বার ক্যানসার, টনসিলের সমস্যার কারণেও কানে ব্যথা হতে পারে। সবকিছু আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক থাকার পরও দীর্ঘমেয়াদি কানের ব্যথার আরেকটি কারণ হলো চোয়ালের হাড়ের সংযোগস্থলের সমস্যা।

কানের ব্যথা সব সময় কান থেকেই হবে, এমন কথা নেই। কানের সবকিছু স্বাভাবিক থাকার পরও কান ব্যথা হতে পারে। কানে ব্যথা নিয়ে তাই প্রাথমিকভাবে একজন জেনারেল প্র্যাক্টিশনারের কাছে যাওয়া নিরাপদ। তিনি দেখে-শুনে-বুঝে চিকিৎসা দিতে পারেন। অথবা তিনি রোগীর অবস্থা বুঝে তাঁকে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, ডেন্টাল সার্জন অথবা ওরাল-ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। এতে করে এদিক-ওদিক ঘুরে রোগীর অর্থ ও সময় নষ্ট কম হবে, সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে।

আচমকা কানের পর্দা ফেটে যাওয়া: শুধু জীবাণুদের দোষে নয়, অনেক সময় আমাদের পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে আচমকা কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। যেমন:
১. আচমকা চড়, আঘাত
২. বাজি-পটকা বা বোমার শব্দ, ঢাক-ঢোল, বাদ্য-বাজনা
৩. হঠাৎ পানিতে ঝাঁপ দেওয়া
৪. অদক্ষ হাতে কান পরিষ্কার করা
৫. বহুতল ভবনে লিফটে আরোহণ
৬. উড়োজাহাজ উড্ডয়ন বা অবতরণের সময়
৭. জোরে নাক ঝাড়া বা হাঁচি দেওয়া
৮. দুর্ঘটনাবশত মাথায় আঘাত লাগা
৯. কটন বাড, মুরগির পালক, চাবি, কলমের ঢাকনা ইত্যাদি দিয়ে কান খোঁচানো।

সাধারণত একজন চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষা না করানো পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা যায় না ওপরের কোনো কারণে কানের পর্দা আসলেই ফেটেছে কি না। তবে কানের পর্দা ফেটে থাকলে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দেয়:

১. কানে তীব্র ব্যথা
২. কান থেকে পরিষ্কার বা রক্ত মিশ্রিত পানি বের হওয়া
৩. কানে কম শোনা
৪. কানে শো শো বা মেশিন চলার মতো শব্দ
৫. মাথা ঘোরানো

চিকিৎসার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে আক্রান্ত কানে পানি ঢোকানো যাবে না। সম্ভব হলে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে হবে। কান পরিষ্কার করার চেষ্টা না করা ভালো, কানে জমাট রক্ত থাকলে সেগুলোও নাড়াচাড়া না করা উচিত। প্রাথমিকভাবে কানে কোনো ধরনের ড্রপ দেওয়া যাবে না। কানের পর্দা ফাটার সঙ্গে সঙ্গে কোনো ড্রপ ব্যবহার করা হলে তা মধ্যকর্ণের ক্ষতি করে। তবে পর্দা ফাটার অনেক দিন পর চিকিৎসা করাতে এলে কানের ভেতর যদি সংক্রমণ পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক কানের ড্রপ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন। ফেটে যাওয়া পর্দা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজে নিজে ঠিক হয়ে যায়। তবে কেবল চিকিৎসায় ঠিক না হলে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

এ ধরনের সমস্যার জন্য জেনারেল ফিজিশিয়ানের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তার পরামর্শ অনুসারে অবশ্যই একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। নিজে থেকে কিছু করতে যাবেন না। তাতে আপনার নিজের ক্ষতি আরও বেশি হতে পারে।
সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

১৮) চোখে আঘাত লাগলে কি করবেন?

যেকোনো বয়সের যে কেউ যেকোনো সময় আঘাত পেতে পারে। তবে এ ধরনের দুর্ঘটনা সাধারণত শিশু-কিশোর আর কর্মজীবীদের মধ্যেই বেশি ঘটতে দেখা যায়। কারখানায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা একধরনের আঘাত, কৃষিকাজে নিয়োজিত যাঁরা, তাঁরা আরেক ধরনের আঘাতের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। পরিবহন দুর্ঘটনাজনিত কারণেও একটি বড় অংশ চোখে আঘাত পেয়ে থাকে।

# কৃষিজাত বস্তুর আঘাত

কৃষিজাত বস্তুর মধ্যে ধান বা শস্যকণা, গাছের ডালপালা বা যন্ত্র থেকে ছুটে আসা ধানের কণা, কাঠের টুকরা ইত্যাদি থেকে আঘাত পেতে প্রায়ই দেখা যায়। মাড়াইয়ের মৌসুমে ধানের আঘাত পাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। আবার ঝোপঝাড় বা মাচায় কাজ করার সময় চোখে খোঁচা লাগাও একটি সাধারণ ঘটনা। এসব আঘাত প্রাথমিক অবস্থায় খুব বেশি সমস্যা করে না, ফলে আমরা তেমন একটা গুরুত্ব দিতে চাই না। কিন্তু অনেক সময় এসব আঘাতই ধীরে ধীরে কর্নিয়াকে সংক্রমিত করে অন্ধত্বের সৃষ্টি করে।

ওয়েল্ডিং মেশিনে যাঁরা কাজ করেন, অসাবধানতায় তাঁদের চোখেও আঘাত লাগতে পারে

# কারখানায় কাজ করতে গিয়ে আঘাত

ছোট ছোট কারখানা বা গ্রিন্ডিং বা ওয়েল্ডিং মেশিনে যাঁরা কাজ করেন, অসাবধানতায় তাঁদের চোখেও আঘাত লাগতে পারে। সাধারণত মেটাল বা লোহার কণা ছিটকে এসে চোখে পড়ে। চোখে বিশেষ করে কর্নিয়ায় এই মেটাল পার্টিকেলগুলো বিঁধে থাকতে পারে। আবার নির্মাণসামগ্রী নিয়ে কাজ করার সময়ও এরূপ আঘাতের শঙ্কা থাকে। বিশেষ করে ইটের টুকরা, মিন্টের কণা বা বালু ইত্যাদি চোখে পড়তে দেখা যায়।

# খেলতে গিয়ে আঘাত

সাধারণত ধারালো বস্তু যেমন কাঁচি-ছুরি, খেলনা, পেনসিল, কম্পাস ইত্যাদি দিয়ে কাজ করার সময় অসাবধানতায় আঘাত লাগতে পারে। ব্যাডমিন্টন খেলার সময় কর্কের আঘাত একটি নিয়মিত ঘটনা। শিশুরা খেলার সময় প্রায়ই অন্যের নখের আঁচড় বা আঘাত পেতে পারে।

উপসর্গ

  • হালকা বা তীব্র ব্যথা। নির্ভর করে আঘাতের তীব্রতা এবং কর্নিয়ায় লেগেছে কি না, তার ওপর। কর্নিয়া সম্পৃক্ত হলে হালকা আঘাত বা ছোট কণাতেই প্রচুর ব্যথা হয়।
  • চোখ লাল হয়ে যায়।
  • চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকে।
  • ফটোফোবিয়া বা আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা হয়।
  • চোখে রক্ত জমাট বাঁধা।
  • দৃষ্টি ঝাপসা বোধ।

চোখে যদি ধুলাবালুর মতো কিছু পড়লে পরিষ্কার পানির ধারা দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে

তৎক্ষণাৎ প্রাথমিক চিকিৎসা

  • সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার পানির ধারা দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে। বিশেষ করে চোখে যদি ধুলাবালুর মতো কিছু পড়ে।
  • হালকা করে পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু দিয়ে পোকা বা কণা জাতীয় কিছু নজরে পড়লে বের করার চেষ্টা করতে হবে। তবে যদি মনে হয় কোনো কিছু বিঁধে আছে, তবে স্পর্শ না করাই ভালো।
  • কেবল একটু আঁচড় লেগেছে, তেমন কিছু চোখে পড়েনি, এমনটি মনে হলে যেকোনো একটি অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ডোজ মেনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

কখন চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে

  • দৃষ্টি ঝাপসা লাগলে।
  • প্রচণ্ড ব্যথা হলে।
  • চোখ অনেক ফুলে গেলে বা চোখ খুলতে অসুবিধা বোধ করলে।
  • কোনো ক্ষত নজরে এলে বা রক্তক্ষরণ হলে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • কারখানায় কাজ করার সময় যথাযথ প্রতিরোধ গিয়ার যেমন চশমা, হেলমেট বা সানগ্লাস ইত্যাদি যেখানে যেটি প্রযোজ্য, অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।
  • খালি চোখে ওয়েল্ডিং মেশিনে কখনোই কাজ করা যাবে না।
  • কৃষিকাজ বিশেষ করে ধানমাড়াইয়ের সময় চোখে গ্লাস পরে কাজ করা প্রয়োজন।

শিশুদের হাতে ধারালো জিনিসপত্র দেওয়া যাবে না। বিপজ্জনক খেলনা থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে। তারপরও একান্তই যদি দিতে হয়, তবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

১৯) ফুড পয়জনিং হলে কি করবেন?

ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া একটি পরিচিত পেটের সমস্যা। অসাবধানতাবশত কোনো কারণে আমাদের খাবারে জীবাণু আক্রমণ করলে, সেই খাবার খাওয়ার পরে যেই অসুস্থতা দেখা দেয় তাকেই বলে ফুড পয়জনিং৷ এটি সাধারণত খুব একটা মারাত্মক হয় না। সচরাচর এক সপ্তাহের মধ্যেই ভাল হয়ে যায়। শিশু অথবা বয়স্ক যেই এতে আক্রান্ত হোক না কেনো, ফুড পয়জনিং এর চিকিৎসা সাধারণত বাড়িতেই করা যায়।

ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ

খাদ্যে বিষক্রিয়ার কিছু লক্ষণ হলো—

  • বমি বমি ভাব বা বমি 
  • পাতলা পায়খানা / ডায়রিয়া 
  • পেট কামড়ানো
  • শরীরের তাপমাত্রা ৩৮° সেলসিয়াস/১০০.৪° ফারেনহাইট বা তার বেশি হওয়া
  • অসুস্থ বোধ করা। যেমন: ক্লান্তি, গায়ে ব্যথা অথবা গায়ে কাঁপুনি ওঠা

যে খাবারের কারণে খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটেছে, তা খাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই সাধারণত এসব লক্ষণগুলো দেখা দেয়। তবে এর ব্যতিক্রম ও ঘটতে পারে। যেমন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শুরু হয়ে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ পেতে কয়েক সপ্তাহও লাগতে পারে।

# ফুড পয়জনিং এ আক্রান্ত হওয়ার কারণ

যেকোনো জীবাণুযুক্ত খাবার খেলেই খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে। বিশেষত খাবারটি যদি—

১.যথেষ্ট তাপ দিয়ে  রান্না বা গরম করা না হয়।

২.সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করা না হয়। যেমন: যে খাবারটি ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন তা যদি ফ্রিজে না রাখা হয়।

৩.দীর্ঘসময় ধরে অসংরক্ষিত বা খোলা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়।

৪.খাবার তৈরি ও পরিবেশনের সাথে জড়িত কেউ যদি অসুস্থ থাকে অথবা ঠিকমতো হাত না ধুয়ে তৈরি বা পরিবেশনে অংশগ্রহণ করে।

  ৫.খাবারটি যদি বাসি, পঁচা বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়।

# ফুড পয়জনিং হলে করণীয় 

খাদ্যে বিষক্রিয়ার চিকিৎসা সাধারণত ঘরে থেকে নিজে নিজেই করা যায়। এর জন্য সাধারণত ডাক্তার দেখানো অথবা হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না৷ খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলো এক সপ্তাহের মধ্যেই আপনাআপনি সেরে যায়। ডায়রিয়া সাধারণত ৩ দিনের মধ্যেই সেরে যায় বা কমে আসে।

# ফুড পয়জনিং এর প্রাথমিক চিকিৎসা:

ফুড পয়জনিং হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপার টি খেয়াল রাখতে হয় তা হল পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করা। যেহেতু পায়খানা বা বমির সাথে শরীর থেকে অনেকটা পানি চলে যায় তাই এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরলজাতীয় খাবার, শরবত, ফলের জুস খেতে হবে। প্রয়োজনে খাবার স্যালাইন পান করতে হবে।

কখন দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে?

খাদ্যে বিষক্রিয়ার সাথে নিচের লক্ষণগুলো উপস্থিত থাকলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে—

  • পায়খানার সাথে রক্ত গেলে
  • অনেক বেশি জ্বর থাকলে (জিহ্বার নিচে থার্মোমিটার দিয়ে মেপে তাপমাত্রা ১০২° ফারেনহাইটের বেশি পেলে)
  • খুব ঘন ঘন বমি হয়ে শরীর থেকে দ্রুত পানি হারাতে থাকলে
  • পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো দেখা দিলে। যেমন: প্রস্রাবের পরিমাণ খুব কমে যাওয়া বা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়া, মুখ ও গলা শুকিয়ে আসা, দাঁড়ালে মাথা ঘুরানো ইত্যাদি
  • ৩ দিনের বেশি ডায়রিয়া থাকলে

# ফুড পয়জনিং প্রতিরোধের ১০ টি কার্যকরী উপায় 

খাদ্যে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা এড়াতে কার্যকর এমন ১০টি উপায় এখানে আলোচনা করা হলো—

১. নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা: নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। সাবান ও পানি দিয়ে পরিষ্কার ভাবে হাত ধুয়ে এরপর ঠিকমতো শুকিয়ে নিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে হাত ধোয়ার কথা একেবারেই ভুলা যাবে না—

  • খাবার তৈরি বা পরিবেশনের আগে
  • খাবার খাওয়ার আগে
  • কাঁচা খাবার ধরার পর। যেমন: কাঁচা মাংস, মাছ, ডিম বা শাকসবজি
  • ডাস্টবিন বা ময়লার বালতি হাত দিয়ে ধরলে
  • টয়লেট ব্যবহারের পরে
  • হাত বা টিস্যু দিয়ে নাক ঝাড়ার পরে
  • কুকুর, বিড়াল বা অন্যকোন পশুপাখি হাত দিয়ে ধরার পরে

২. রান্নার জায়গা ও বাসনকোসন সবসময়  পরিষ্কার রাখা: কাটাবাছার জায়গা, রান্নার জায়গা, ছুরি, বটি ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত বাসনকোসন সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। খাবার তৈরি করার আগে ও পরে, বিশেষ করে  যদি কাঁচা মাংস, মাছ, ডিম বা সবজির সংস্পর্শে আসে সেক্ষেত্রে এসব  ভালোমতো পরিষ্কার করে নিতে হবে। পরিষ্কার করার জন্য সাবান ও গরম পানিই যথেষ্ট। এর জন্য জীবাণুনাশক স্প্রে ধরনের কিছু ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। 

৩. বাসন মোছার ন্যাকড়া বা কাপড় নিয়মিত ধোয়া বা পরিষ্কার করা: বাসন মোছার কাজে ব্যবহৃত ন্যাকড়া, কাপড় ও ছোট তোয়ালেগুলো প্রতিদিনের কাজ শেষে ধুয়ে দিতে হবে এবং পুনরায় ব্যবহারের আগে ঠিকমতো শুকিয়ে নিতে হবে। কারণ ময়লা, ভেজা কাপড় জীবাণু ছড়ানোর আদর্শ স্থান।

৪. আলাদা আলাদা কাটিং বোর্ড ব্যবহার বা পৃথক স্থানে কাটার ব্যবস্থা করা: কাঁচা খাবার (যেমন: কাঁচা মাংস ও মাছ) কাটার জন্য আলাদা আলাদা কাটিং বোর্ড ব্যবহার করতে হবে। এর মাধ্যমে এক খাবারে উপস্থিত জীবাণু অন্যান্য খাবারে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। আলাদা আলাদা কাটিং বোর্ড ব্যবহার সম্ভব না হলে প্রতিবার ব্যবহারের পর কাটিং বোর্ড অথবা কাটাকুটির জায়গাটি পরিষ্কার করে নিতে হবে যাতে কোন জীবাণু থেকে না যায়। 

৫. কাঁচা মাছ-মাংস আলাদাভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা: সালাদ, ফল, পাউরুটি ইত্যাদি যেসব খাবার রান্নার প্রয়োজন হয় না সেগুলো সবসময় এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে কাঁচা খাবার (যেমন: কাঁচা মাংস-মাছ) এর সংস্পর্শে না আসে। কারণ এগুলো যেহেতু রান্না করতে হয় না, তাই কাঁচা মাছ-মাংস থেকে কোন ধরণের জীবাণু এতে প্রবেশ করলে তা সাধারণত আর মরবে না। 

৬. কাঁচা মাছ-মাংস ফ্রিজের নিচের তাকে রাখা: কাঁচা মাছ-মাংস সবসময় ফ্রিজের নিচের তাকে রাখা ভালো যাতে এগুলো বাকি খাবারের সংস্পর্শে না আসে বা এই তাক থেকে রক্ত বা পানি কোন কিছু গড়িয়ে অন্যান্য খাবারের গায়ে না পড়ে।  

৭. পর্যাপ্ত উত্তাপ দিয়ে ভালোমতো রান্না করা: কাঁচা মাছ মাংস, সসেজ, কাবাব এসব চুলায় বা উনুনে ততক্ষণ পর্যন্ত রান্না করতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত ভাপ বেরুচ্ছে। সেই সাথে নিশ্চিত কর‍তে হবে যে মাংস পুরোপুরি রান্না হয়েছে। ভেতরের অংশ যেন গোলাপি (অর্থাৎ, কাঁচা) না থেকে যায় তা খেয়াল রাখতে হবে। রান্নার আগে মাছ-মাংস ধোয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যাতে এসব থেকে পুরো রান্নাঘরে জীবাণু ছড়িয়ে না পড়ে।   

কাঁচা মাংস ফ্রিজে রাখলে এতে উপস্থিত ক্যাম্পাইলোবাক্টার নামক ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কিছুটা কমে কিন্তু সম্পূর্ণভাবে কমে না। মাংসে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সম্পূর্ণভাবে দূর করার জন্য রান্নাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।

৮. ফ্রিজের তাপমাত্রা  ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর নিচে রাখা:  ফ্রিজের তাপমাত্রা সবসময় ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর নিচে রাখা উচিত। কারণ এই নিম্ন তাপমাত্রায় জীবাণু বাঁচতে বা সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে না। সাধারণত অটোমেটিক ফ্রিজগুলোতে তাপমাত্রা এভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা থাকে৷ 

ফ্রিজে একসাথে অনেক কিছু রাখার ফলে যদি পুরো ফ্রিজ ভরে যায়, বাতাস চলাচলের মত জায়গা না থাকে তবে এর ফলে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ফ্রিজিং এ ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই ফ্রিজে অতিরিক্ত জিনিস একসাথে রাখা পরিহার করতে হবে৷ 

এছাড়া প্রয়োজন ব্যতীত ফ্রিজের দরজা যেন খোলা রাখা না হয়—সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। 

৯. অতিরিক্ত খাবারটুকু যত দ্রুত সম্ভব ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দেওয়া: অনেক সময়ে বেশি পরিমাণে খাবার একসাথে রান্না করে কিছু পরিমাণ সাথে সাথে খাওয়া হয় আর বাকিটা পরের বেলায় খাওয়ার জন্য রেখে দেওয়া হয়। এমনক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত খাবারটুকু রান্নার পর যত দ্রুত সম্ভব (সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট বা দেড় ঘন্টার মধ্যে) ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। 

ফ্রিজে রাখা এসব খাবার দুইদিনের মধ্যেই খেয়ে ফেলা উচিত এবং বারবার গরম করা উচিত না। 

১০. মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার না খাওয়া: যেকোনো খাবার, বিশেষ করে পাউরুটি, প্যাকেটজাত দুধ ইত্যাদি যেসব খাবারের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ লেখা থাকে, তা খাওয়ার আগে অবশ্যই তারিখগুলো দেখে নিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে এমন কোনো কিছু কোনো অবস্থাতেই খাওয়া উচিত নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে কিন্তু খাবারটি দেখে বা ঘ্রাণ নিয়ে মনে হচ্ছে যে এখনো নষ্ট হয়নি—এমনটা মনে হলেও খাবারটি খাওয়া যাবে না। 

কারণ এই মেয়াদের তারিখ সাধারণত নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নির্ধারণ করা হয়৷ পরীক্ষায় দেখা হয় যে এই খাবারটিতে জীবাণু আক্রমণ করতে ঠিক কতদিন সময় লাগতে পারে। তাই দেখে বুঝা না গেলেও মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারে প্রকৃতপক্ষে জীবাণু আক্রমণ ও বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে দেয়।

২০) হাইপোথার্মিয়া বা প্রচন্ড ঠান্ড  হলে কি করবেন?

ঠাণ্ডা পরিবেশের সংস্পর্শে এলে মানবদেহ শরীরের তাপ উৎপাদনের চেয়ে দ্রুত হারায়।

ঠান্ডার দীর্ঘস্থায়ী এক্সপোজার অবশেষে আপনার শরীরের সঞ্চিত শক্তি ব্যবহার করবে, যা আপনার শরীরের মূল তাপমাত্রাকে কমিয়ে দেয়।

অন্যান্য কারণ এবং অবস্থা হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যার মধ্যে বয়সের চরমতা এবং নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যের অবস্থা যেমন অপুষ্টি।

# হাইপোথার্মিয়ার লক্ষণ প্রাথমিক চিকিৎসা

হাইপোথার্মিয়ার পর্যায়গুলি হালকা থেকে গুরুতর হাইপোথার্মিয়া পর্যন্ত।

এমনকি হালকা পর্যায় একটি জরুরি অবস্থা।

এই কারণেই জরুরি নম্বরে কল করা জরুরি যদি আপনি এর লক্ষণগুলি লক্ষ্য করেন।

জরুরী চিকিৎসা সেবা দলের আসার জন্য অপেক্ষা করার সময়, এটি প্রদান করা অপরিহার্য প্রাথমিক চিকিৎসা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য।

প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে ব্যক্তিকে একটি উষ্ণ, শুষ্ক জায়গায় নিয়ে যাওয়া এবং পোশাক সরানো অন্তর্ভুক্ত।

নীচের গ্রাফিক উপস্থাপনা হাইপোথার্মিয়ার উপসর্গ এবং প্রাথমিক চিকিৎসার পরামর্শ দেখায়:

# হাইপোথার্মিয়ার লক্ষণ লক্ষণ

হাইপোথার্মিয়াকে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যেতে পারে: হালকা হাইপোথার্মিয়া, মাঝারি হাইপোথার্মিয়া বা গুরুতর হাইপোথার্মিয়া।

হাইপোথার্মিয়ার লক্ষণ এবং লক্ষণগুলিকে মোটামুটিভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের তাপমাত্রার সীমার সাথে গোষ্ঠীভুক্ত করা যেতে পারে:

  • হালকা হাইপোথার্মিয়ার জন্য শরীরের তাপমাত্রা 35 °C এর নিচে, মাঝারি হাইপোথার্মিয়ার জন্য 32 °C এর নিচে এবং গুরুতর হাইপোথার্মিয়ার জন্য 27 °C এর নিচে।
  • ক্লান্তি বা তন্দ্রা
  • চেতনা হ্রাস
  • হাত-পা অসাড়
  • শ্বাসকষ্ট
  • বিভ্রান্তি, স্মৃতিশক্তি হ্রাস বা ঝাপসা বক্তৃতা
  • শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
  • দুর্বল নাড়ি
  • উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদস্পন্দন এবং রক্তনালীগুলির সংকোচন

# হাইপোথার্মিয়া জন্য প্রাথমিক চিকিত্সা

প্রাথমিক চিকিত্সা হাইপোথার্মিয়ার ডিগ্রির উপর নির্ভর করে, তবে উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিকে উষ্ণ করা।

হাইপোথার্মিয়ার উপসর্গযুক্ত যে কেউ অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন।

জরুরী চিকিৎসা সেবা দলের আসার জন্য অপেক্ষা করার সময় প্রথম উত্তরদাতা নিম্নলিখিতগুলি করতে পারেন।

  • হাইপোথার্মিক ব্যক্তিকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যান।
  • ভেজা পোশাক সরান এবং ব্যক্তিকে শুকিয়ে দিন
  • হাইপোথার্মিক ব্যক্তির ধড় প্রথমে গরম করুন, হাত ও পা নয়। ব্যক্তিকে গরম করার জন্য সরাসরি তাপ, যেমন গরম করার বাতি ব্যবহার করবেন না।
  • হালকা বা মাঝারি হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য, তাকে কম্বলে মুড়িয়ে বা শুকনো কাপড় পরিয়ে গরম করুন।
  • হাইপোথার্মিক ব্যক্তিকে গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন না। দ্রুত গরম করলে কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া হতে পারে।
  • যদি গরম জলের ব্যাগ বা রাসায়নিক গরম করার প্যাড ব্যবহার করা হয় তবে সেগুলিকে একটি কাপড়ে মুড়িয়ে রাখুন। এগুলি সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না।
  • যদি কারো গুরুতর হাইপোথার্মিয়া থাকে এবং সে অজ্ঞান হতে পারে, অবিলম্বে সিপিআর শুরু করুন। থেমে যাবেন না, এমনকি একজন রোগীর ক্ষেত্রেও যে মৃত দেখায়, যতক্ষণ না শরীরের মূল তাপমাত্রা 89.6 °F (30 °C থেকে 32 °C) এর উপরে হয় এবং এখনও জীবনের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
  • হাইপোথার্মিক ব্যক্তি সচেতন হলে, তাকে একটি গরম পানীয় দিন। ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন কারণ এটি হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • একবার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে, হাইপোথার্মিক ব্যক্তিকে শুকনো এবং একটি উষ্ণ কম্বলে মুড়িয়ে রাখুন।
  • যখন উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়, তখন স্বাস্থ্যকর্মীরা উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, যার মধ্যে শিরায় তরল এবং উষ্ণ, আর্দ্র অক্সিজেন রয়েছে। গুরুতর হাইপোথার্মিয়া উষ্ণ তরল এবং প্রায়শই শিরাগুলিতে ইনজেকশনের স্যালাইন দ্রবণ দিয়ে চিকিত্সা করা হয়।

২১)প্রচণ্ড গরমে মূর্ছা যাওয়া / হিট স্টোক ?

এবার গ্রীষ্মের তেজ বেশি। প্রচণ্ড গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এমন গরমে কেউ কেউ মূর্ছা যেতে পারেন। দেখা দিতে পারে হিট স্ট্রোক বা গরমের আরও নানা সমস্যা।

প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা লোপ পায়। ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। পরিবেশের তাপ বাড়লে আমাদের দেহ-ইঞ্জিন ঘাম নিঃসরণের মাধ্যমে শরীরকে শীতল করে।

হিট স্ট্রোকে ঘাম নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। তাপ উঠে যায় এমনকি ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি। মনে হয় চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে পরিণতি হতে পারে মারাত্মক।

লক্ষণ:

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, ক্লান্তি, শারীরিক দুর্বলতা, মাংসপেশিতে ব্যথা, পেশিতে খিল লেগে যাওয়া, মানসিক বিপর্যস্ততা, এলোমেলো আচরণ, কথাবার্তায় আড়ষ্টতা, খিঁচুনি, মূর্ছা যাওয়া প্রভৃতি।

ঝুঁকিতে কারা :

বয়স্ক ও স্থূলকায় ব্যক্তি এবং শিশুরা। যারা পেশাগত কারণে দীর্ঘ সময় বাইরে থাকেন। ক্রীড়াবিদসহ ক্ষেতখামারে কর্মরত শ্রমিকেরা। শরীরে পানি কমানোর ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের কিছু ওষুধ, মানসিক রোগে ব্যবহৃত কিছু ওষুধ খাওয়া ব্যক্তিরা। হৃদরোগ ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি।

চিকিৎসা :

হিট স্ট্রোক এক ধরনের মেডিকেল ইমার্জেন্সি। দাবদাহের কারণে এমনটি হলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

পথেঘাটে কারও এমন হলে তাৎক্ষণিক যেসব ব্যবস্থা নেবেন-

রোগীর জামাকাপড় খুলে ফেলুন বা ঢিলা করে দিন।

ঠান্ডা পানি শরীরে ছিটিয়ে দিন, ফ্যান ছেড়ে বাতাসের ব্যবস্থা করুন।

বোগলে ও কুঁচকির নিচে বরফের প্যাকেট রাখুন। পারলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বরফপানির গোসল করান।

রোগী পানি খেতে সক্ষম হলে ঠান্ডা পানি খাওয়াবেন।

রোগীর তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি না আসা পর্যন্ত এ ব্যবস্থা চালু রাখুন।

তাপমাত্রা না কমলে কিংবা জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে নিয়ে যান।

সুস্থ থাকতে যা করতে হবে :

ঘন ঘন পানি খাওয়া; অতিরিক্ত ঘাম হলে লবণ-লেবুর শরবত খেতে হবে।

বাইরে বেরোলে সঙ্গে পানির বোতল রাখা এবং সুতি কাপড়ের পাতলা ঢিলেঢালা জামা পরা।

গরমে বাইরে কাজ করতে হলে মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।

অ্যালকোহল, কফি, অতিরিক্ত চা পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।অতিরিক্ত আমিষ, চিনি ও লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

২২ )বিষাক্ত কিছু খেয়ে ফেললে কী করবেন?

যেকোনো রকম বিষাক্ত দ্রব্য, ওষুধ ইত্যাদি আলাদা স্থানে রাখা উচিত,কখনো কখনো কেউ ভুলবশত বা ইচ্ছা করে এমন কিছু খেয়ে ফেলেন, যা শারীরিক অসুস্থতা, ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। আবার শিশুদের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত বিষক্রিয়া হতে পারে। আবার কখনো কখনো দুষ্কৃতকারী কর্তৃক বিষাক্ত দ্রব্য প্রয়োগের ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। এমনটা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে অনেকেই দিশাহারা হয়ে পড়েন, কী করা উচিত বুঝতে না পেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান। তাই প্রাথমিকভাবে কী করা দরকার, সেই সম্পর্কে কিছু ধারণা সবারই থাকা উচিত।

# শুরুতেই যা করতে হবে
কেউ বিষাক্ত কিছু খেয়েছেন বা পান করেছেন, এমনটা ধারণা করা হলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া প্রয়োজন। অনেকেই রোগী নিয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেন, চিকিৎসা হচ্ছে না কেন বলে আতঙ্কিত হন, হম্বিতম্বি করেন। আসলে চিকিৎসকের চেম্বারে বা বহির্বিভাগে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা না–ও থাকতে পারে, তাই সবচেয়ে ভালো হয়, কোনো সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা। এর মধ্যে কী খাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা দরকার।

কেউ বিষাক্ত কিছু খেয়েছেন বা পান করেছেন, এমনটা ধারণা করা হলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া প্রয়োজন

রোগী সচেতন থাকলে তার কাছ থেকে বিষাক্ত দ্রব্যের নাম, পরিমাণ, বমি হয়ে বেরিয়ে গেছে কি না, সে বিষয়ে তথ্য জেনে নেওয়া উচিত। রোগী অচেতন থাকলে বিষের কৌটা বা বোতল, ওষুধের খালি পাতা অবশ্যই সংগ্রহ করে চিকিৎসককে দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীর শরীর থেকে কোনো বিশেষ গন্ধ আসছে কি না, খেয়াল করতে হবে। যদি কীটনাশকের গন্ধ পাওয়া যায় বা রোগীর জামাকাপড়ে কীটনাশকের অস্তিত্ব বোঝা যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীর শরীর পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এমনকি রোগী বমি করলে তা থেকেও চামড়ার মাধ্যমে বিষ শরীরে প্রবেশ করতে পারে, তাই কীটনাশক বিষক্রিয়ায় শরীরে বা জামাকাপড়ে লেগে থাকা কীটনাশক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

# কখন বমি করাবেন, কখন করাবেন না
সচেতন রোগীকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ঘুমের বা অন্য কোনো ওষুধ অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে বমি করানো যেতে পারে, কিন্তু অচেতন রোগীকে বা কেরোসিন অথবা অ্যাসিড–জাতীয় বিষক্রিয়ায় কখনোই বমি করানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। অচেতন রোগীকে বমি করানো হলে শ্বাসনালিতে চলে যেতে পারে, আবার কেরোসিন বা তেলজাতীয় জিনিস, যা কিনা পানির চেয়ে হালকা, শ্বাসনালিতে সহজেই প্রবেশ করে। অ্যাসিড বা ক্ষারজাতীয় পদার্থ অন্ননালির প্রদাহ সৃষ্টি করে, বমি করানো হলে অন্ননালির ক্ষতি আরও প্রকট হওয়ার শঙ্কা বেড়ে যায়, তাই কিছু ক্ষেত্রে বমি করানো আরও জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। আর যদি বমি করানোর প্রয়োজন পড়ে, তাহলে পানিতে লবণ গুলিয়ে বা তিতা জিনিস খাইয়ে চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে এসব ব্যাপার নিয়ে কখনোই অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ করা যাবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, জরুরি বিভাগে রোগীকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা দরকার।

রোগী যদি অচেতন থাকেন, অতিরিক্ত লালা ক্ষরণ হয়, বমি হয়, তাহলে রোগীকে বাঁ কাত করে দিতে হবে, না হলে শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুবিধা হলে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

তবে দুর্ঘটনা ঘটার আগেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা ভালো। যেকোনো রকম বিষাক্ত দ্রব্য, ওষুধ ইত্যাদি আলাদা স্থানে রাখা উচিত। এ ছাড়া রাস্তাঘাটে দুষ্কৃতকারী কর্তৃক বিষাক্ত দ্রব্য প্রয়োগ এড়ানোর জন্য অবশ্যই অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা বা অচেনা কারও দেওয়া খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা যাবে না। যদি কোনো খাবার খাওয়ার পরপরই অসুস্থ বোধ হয়, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বা অন্যান্য পথচারীর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আর পথে অচেতন অবস্থায় কাউকে দেখতে পেলে নিকটস্থ হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি।